সাবেক প্রধান বিচারপতির বাড়িটি কেনেন তাঁর কথিত 'পিএস'

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন (সামনে) শাহজাহান ও নিরঞ্জন। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন (সামনে) শাহজাহান ও নিরঞ্জন। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বাড়ি বিক্রির দাম বাবদ সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে চার কোটি টাকা দেওয়া হয়। ফারমার্স ব্যাংকের পে অর্ডারের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা দেওয়া হয়।

আজ রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহা নামের দুই ব্যক্তির আইনজীবীরা এমন দাবি করেন। ওই দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল সংস্থাটি। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফারমার্স ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ‘একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা স্থানান্তর করা হয়।

দুদকের তলবে আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে দুই আইনজীবীসহ সেখানে হাজির হন নিরঞ্জন ও শাহজাহান। সাড়ে নয়টার দিকে আইনজীবীসহ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে নেওয়া হয়। পরে আইনজীবীরা ফিরে এসে দুদকের অভ্যর্থনা কক্ষে অপেক্ষা করেন।

সেখানে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় দুই আইনজীবীর। আফাজ মাহমুদ রুবেল ও নামজুল আলম নামের এই দুই আইনজীবী প্রথম আলোকে বলেন, দুদকের তলবে হাজির হয়ে তাঁরা ১৭১ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের দুই মক্কেল কোনো অন্যায় করেননি দাবি করে আইনজীবীরা বলেন, সরল বিশ্বাসে তাঁরা শান্তি রায় ও রঞ্জিত রায়কে সহায়তা করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, এস কে সিনহার উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ছয়তলা বাড়িটি ২০১৬ সালের শুরু দিকে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শান্তি রায় ছয় কোটি টাকায় কেনার জন্য বায়না করেন। শান্তি রায় সাবেক প্রধান বিচারপতির ‘কথিত পিএস’ রঞ্জিতের স্ত্রী। বাড়িটি বায়না করার পর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ৫৫ লাখ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণের সময় নেওয়া আরও ১ কোটি ৪০ লাখসহ মোট ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি চার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় ফারমার্স ব্যাংকের পে অর্ডারের মাধ্যমে।

শাহজাহান ও নিরঞ্জনের আইনজীবী (বায়ে) নামজুল আলম ও আফাজ মাহমুদ। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
শাহজাহান ও নিরঞ্জনের আইনজীবী (বায়ে) নামজুল আলম ও আফাজ মাহমুদ। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

প্রসঙ্গত, ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য শান্তি রায় ব্যবহার করেন নিরঞ্জন ও শাহজাহানকে। নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা শান্তি রায়ের স্বামী রঞ্জিতের ভাতিজা। আর শাহজাহান রঞ্জিতের বন্ধু। ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সময় বন্ধক রাখা হয় শান্তি রায়ের মালিকানায় থাকা সাভারের ৩১ শতাংশ জমি।

আইনজীবীদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে জমির বায়না দলিল হয় এবং ওই বছরের ৮ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহা সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার মাধ্যমে চার কোটি টাকা গ্রহণ করেন। ২৪ নভেম্বর হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি শান্তি রায় বুঝে নেন।

সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত নিরঞ্জন ও শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিরঞ্জন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কৃষিকাজ করেন। চাচার কথামতো তাঁকে সহায়তার জন্য ঋণ নিয়েছেন। শাহজাহান জানান, রঞ্জিত তাঁর বন্ধু। টাঙ্গাইলের ধরবাড়ী এলাকায় তাঁর দোকান রয়েছে। রঞ্জিতের কথামতো ঋণ নিয়ে তাঁকে দিয়ে দিয়েছেন। রঞ্জিত সে টাকা কাকে দিয়েছন সেটা তিনি জানেন না।

দুদক সূত্র জানায়, ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে দুদকের। সে কারণে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই–বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছ দুদক সূত্র। সূত্রটি বলছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে আরও কী কী ধরনের অপরাধ হয়েছে, সেগুলো যাচাই–বাছাই ও বিশ্লেষণ শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।