আওয়ামী লীগে বিভক্তি, সুবিধায় বিএনপি

>

ময়মনসিংহ ৫ : আওয়ামী লীগ এবার আর ছাড় দিতে চায় না। জাপা সাংসদের বিরুদ্ধে দলের নেতারা এককাট্টা। তবে মনোনয়ন নিয়ে দলের দুটি পক্ষের বিরোধ স্পষ্ট।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের বিভক্তির সুফল ঘরে তুলেছে বিএনপি। উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলের এই বিভক্তি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলটিকে ভোগাতে পারে। প্রধান দুই দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

মুক্তাগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির সালাহউদ্দিন আহমেদ। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দিয়েছে দুদক। জাপা সাংসদের এই পরিণতিকে সুযোগ হিসেবে দেখছে মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থীরা এ আসন থেকে জয়ী হয়ে সংসদে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতা ভেঙে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কে এম খালিদ সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির কারণে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবার আর ছাড় দিতে চায় না। জাপা সাংসদের বিরুদ্ধে দলের নেতারা এককাট্টা। তবে মনোনয়ন নিয়ে দলের দুটি পক্ষের বিরোধ স্পষ্ট। আর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন দুই ভাই সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও জাকির হোসেন।

মুক্তাগাছা আওয়ামী লীগে বিরোধ স্পষ্ট হয়েছে এক বছর আগে। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খালিদ বাবু ও সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সরকার। অপর পক্ষে মুক্তাগাছা পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল হাই আকন্দ এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমেদ। এক বছর ধরে দুই পক্ষ দলীয় কর্মসূচি আলাদাভাবেই পালন করে। খালিদ, হাই, বদর উদ্দিনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আরও আছেন মো. তারেক, নজরুল ইসলাম, সেলিনা খসরু ও দেবাশীষ ঘোষ।

তবে বিরোধকে বড় বিষয় মনে করছেন না সাবেক সাংসদ খালিদ বাবু। তিনি বলেন, বড় দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে। আর জাপার সাংসদ নানা কারণে বিতর্কিত। তাঁকে আর ছাড় দেওয়া হবে না।

বদর উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাবেক সাংসদ দলীয় কর্মকাণ্ডে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন সঠিক না হওয়ায় আওয়ামী লীগ হেরেছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থক ও নেতা-কর্মীরা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিরোধের সুযোগ নিতে পারে বিএনপি। নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হলে দলের বড় বিপদ হতে পারে। এদিকে দুই পক্ষের বিরোধে কান না দিয়ে নিজের প্রচারে নেমে পড়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. তারেক।

বিতর্কে সাংসদ

এক বছর আগে নিজের দুই মেয়ের বিয়েতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সমালোচনায় পড়েন জাপার সাংসদ সালাহউদ্দিন। এক মেয়ের তো বাল্যবিবাহ দিয়ে দেন তিনি। অতিরিক্ত ব্যয় করার বিষয়ে দুদকের তদন্তের মুখোমুখি হন তিনি। তদন্তে বেরিয়ে আসে, ২০১৪ সালে নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদের বিষয়ে অসত্য তথ্য দিয়েছেন তিনি। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয় দুদক।

তবে এসব ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে মনে করেন সাংসদ সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, সাংসদ হওয়ায় যাঁরা ঈর্ষাকাতর, তাঁরা তাঁর মেয়েদের বিয়ে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করেছেন।

বিএনপি

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির ছিল জয়জয়কার। তবে জাতীয় নির্বাচনের বেলায় এ আসনে বিএনপি বেশ নীরব। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ও তাঁর ভাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেনের মধ্যে কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে জল্পনা আছে। দুই ভাইয়ের বাইরে প্রার্থী আছেন সাবেক সাংসদ আবু রেজা ফজলুল হক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকারিয়া হারুন। আবার পৌর মেয়র শহীদুল ইসলাম প্রতিকূল অবস্থায় ভোটে বিজয়ী হওয়ায় তাঁর পক্ষেও দলে জোর দাবি রয়েছে। উপজেলা বিএনপির মধ্যেও রয়েছে দুটি পক্ষ। এক পক্ষ সভাপতির নিয়ন্ত্রণে। অপর পক্ষ উপজেলা চেয়ারম্যান জাকারিয়া হারুনের নেতৃত্বে। এই অংশটি আবার মোশাররফ হোসেনের অনুসারী।

জাকির হোসেন বলেন, ‘মোশাররফ হোসেন আমার পিতৃতুল্য বড় ভাই। তিনি মনোনয়ন পেলে আমি অবশ্যই তাঁর সঙ্গে থাকব।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমার প্রথম চাওয়া মুক্তাগাছা থেকে মনোনয়ন। তবে দল যদি আমাকে ময়মনসিংহ সদর আসনে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি সেখানেই নির্বাচন করব।’