মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়েই বখাটেদের হাতে প্রাণ দিতে হলো বাবাকে

দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিতে আসা বখাটেদের বাধা দিতে গিয়ে ছুরিকাহত হন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পেরীরদহ গ্রামের ছায়েদ আলী। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার মৃত্যু হয় ছায়েদ আলীর। গতকাল শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্য দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁরা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসায় যাতায়াত পথে বগুড়া শহরতলির নিশ্চিন্তপুর এলাকার বখাটে রনি আহমেদ দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতেন। এরই মধ্য বিয়ের প্রস্তাবও দেন তিনি। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় গতকাল রাত আটটার দিকে কয়েকজনকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে তুলে নিতে আসেন রনি আহমেদ। এতে ভয়ে ঘরের ভেতরে লুকিয়ে পড়ে ওই ছাত্রী। বখাটেদের ঘরে ঢুকতে বাধা দেন ছায়েদ আলী। এ সময় বখাটে যুবকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ছায়েদ আলীর পাঁজরে চাকু বসিয়ে দেন। চিৎকার –চেঁচামেচিতে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম। বখাটেরা তাঁর হাতেও চাকু বসিয়ে জখম করেন। শফিকুলের চিৎকারে ছুটে আসেন অন্য প্রতিবেশীরা। রক্তাক্ত চাকুসহ আটক করা হন রনি আহমেদসহ আরেক সহযোগীকে। তবে পালিয়ে যান চার থেকে পাঁচজন বখাটে। পরে ছায়েদ আলীকে দ্রুত বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত নয়টার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ছায়েদ আলীর মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

প্রতিবেশী ও মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল আলিম বলেন, সহায়–সম্বলহীন ছায়েদ আলীর বসতবাড়ি টুকুই সম্বল। বৃদ্ধ বাবা রবিউল ইসলাম গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করেন। ছায়েদ আলী গ্রামঘুরে মুরগি কিনে শহরে ফেরি করে বিক্রি করেন। সংসারে শত অভাবের পরও দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগান তিনি।

ওই ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রনি নামে কাউকে চিনি না, কিছুদিন হলো মাদ্রাসায় যাতায়াত পথে ওই বখাটে উত্ত্যক্ত করত। বাবা-মাকে বিষয়টি জানিয়েছি। শনিবার রাতে হঠাৎ করে কয়েকজন বখাটে বাড়িতে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। তারা আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে চায়। ভয়ে ঘরে লুকিয়ে পড়ি। আমাকে বাঁচাতে গেলে ওরা আমার বাবাকে খুন করে। আমি এ পাষণ্ডদের ফাঁসি চাই।’

মহিষাবান ইউপির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে নিরীহ দরিদ্র ব্যবসায়ী ছায়েদ আলী বখাটেদের হাতে খুন হলেন। মাত্র ছয়-সাতজন বখাটে যুবক গ্রামে ঢুকে বাবা-মায়ের সামনে থেকে কিশোরী মেয়েকে তুলে নিতে আসেন। গ্রামে এত লোকজন, অথচ প্রতিরোধ করা গেল না, এটা সবার জন্য লজ্জার। এ ঘটনা অন্য অভিভাবকদের শঙ্কিত ও আতঙ্কিত করেছে। এ ঘটনা রীতিমতো বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এখন আমরা খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের নিকট বুঝে দেওয়া হয়েছে। আটক রনি ও তাঁর অপর সহযোগী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় নিহত ছাবেদ আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।