খুলনার নির্বাচনে ভোট এলেই সামনে আসে ২২ খাল

খুলনা সিটি করপোরেশন ভবন । ফাইল ছবি
খুলনা সিটি করপোরেশন ভবন । ফাইল ছবি

খুলনা নগরের বাসিন্দাদের দুঃখ ২২ খাল। খালগুলো দখল করে আছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন এলেই সামনে আসে খালগুলোর প্রসঙ্গ। অতীতের মতো এবারের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এসব খাল উদ্ধার, দখলদারদের উচ্ছেদ ও শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মেয়র পদপ্রার্থীরা।

গত শনিবার সন্ধ্যায় কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে খুলনা শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে পানি জমে যায়। সেই পানি পুরোপুরি না সরতেই গতকাল রোববার সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী একই অনুষ্ঠানে বললেন, তাঁরা মেয়র হলে খাল উদ্ধার করবেন। খুলনায় এনজিও মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এই অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজ নানা সমস্যা ও ভবিষ্যৎ মেয়রের কাছে তাদের প্রত্যাশা তুলে ধরে।

প্রথমেই ২২টি খাল উদ্ধারের দাবি ওঠে। জবাবে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দখলদারদের উচ্ছেদ ও খাল উদ্ধারে সব রাজনৈতিক দলকে একমত হতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে মেয়র হন। ছিলেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত। ১০ বছর আগের ওই নির্বাচনে তিনি খাল উদ্ধারের কথা বলেছিলেন। গতকালের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের গবেষণার ভিত্তিতে প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগে তিনি ক্ষমতা থেকে চলে যান। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেক পরাজিত হন বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কাছে। মনিরুজ্জামানও নির্বাচনের আগে একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এখন বলছেন, উচ্ছেদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা মেয়রকে দেওয়া হয় না।

গতকাল দুপুরে মতিয়াখালি গিয়ে দেখা গেল, খালটির মাঝে কংক্রিটের ছোট নালা তৈরি করছে সিটি করপোরেশন। লবণচোরা খালের ওপর সরকারি একটি ক্লিনিক এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়। ২২ খাল দখলের সত্যতা মেলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ২০১৫ সালের এক গবেষণায়ও। ৮১ জন প্রভাবশালী খাল দখল করেছেন বলে স্থানীয় এনজিও কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ এক প্রকাশনায় জানিয়েছে।

কর্মসংস্থানের আশ্বাস খালেকের

গতকাল ১৩ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ, পথসভা ও মতবিনিময় সভা করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। এসব আয়োজনে তিনি নির্বাচিত হলে তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।


পরামর্শক পরিষদ গঠনের আশ্বাস নজরুলের

বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, নগরবাসীর রায়ে মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনকে আদর্শ সেবামূলক নাগরিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবেন। অভিজ্ঞ ও গুণী ব্যক্তিদের নিয়ে পরামর্শক পরিষদ গঠন করে নগরের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।

বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে বহিষ্কার

খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ হাফিজুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাওয়ার অভিযোগ আছে।