ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে দুদকের অসহযোগিতার মামলার হুমকি

পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান।প্রথম আলোর ফাইল ছবি
পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান।প্রথম আলোর ফাইল ছবি

পুলিশের বিতর্কিত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান তাঁর দাবির সপক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেননি। রোববারের মধ্যে এসব নথিপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও সোমবার পর্যন্ত না দেওয়ায় অনুসন্ধানে অসহযোগিতার অভিযোগে মামলা করার হুমকি দিয়েছে সংস্থাটি।

দুদক সচিব আবু শামসুল আরেফিন আজ সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, সম্পদের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান দলের কাছে কাগজপত্র জমা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা না দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। তিনি বলেন, অনুসন্ধানে অসহযোগিতা করলে দুদক আইনের ১৯/৩ ধারা অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার দুদকে সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিজানুরকে। সেদিন দুদক সচিব জানিয়েছিলেন, রোববারের মধ্যে সম্পদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জমা দেবেন বলে দুদকের কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছেন মিজান। 

ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এর আগে মিজানুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
নামে-বেনামে ডিআইজি মিজানের শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে দুদকের কাছে। সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ডিআইজি মিজানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিভিন্ন ব্যাংক, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চিঠি পাঠান। তথ্য পাওয়ার পরই মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের দুদকে জন্য তলব করা হয়।
৩ মে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য তলবি নোটিশ পেয়ে কালো রঙের একটি পাজেরো গাড়িতে সাইরেন বাজিয়ে দুদকে আসেন এবং সেই গাড়িতে ফিরে যান।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই দিন বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডিআইজি মিজান। এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে আনা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, আয়কর ফাইলে দেওয়া তথ্যের বাইরে তাঁর কোনো সম্পদ নেই।

দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ ওঠে মিজানুরের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনেরও অভিযোগ ওঠে। জানা গেছে, ব্যাংক কর্মকর্তা মরিয়ম আক্তারকে গত বছরের জুলাই মাসে বিয়ে করেন মিজানুর রহমান। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেই কথা গোপন রাখার শর্ত দিয়েছিলেন স্ত্রীকে। মরিয়ম রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি গত ১২ ডিসেম্বর পুলিশ পাঠিয়ে মরিয়মকে গ্রেপ্তার করান।
সবশেষ মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদপাঠিকা প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ তোলেন। ওই সংবাদপাঠিকা প্রথমে ঢাকার বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে তিনি পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ জানিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন। এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে মিজানুর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আই অ্যাম স্যরি।’

তবে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য রাত নয়টার দিকে প্রথম আলোকে টেলিফোনে জানান, মিজানুর রহমান দুদকে লোক পাঠিয়ে নথিপত্র জমা দিয়েছেন।