আদালতে আত্মসমর্পণ ২৪ আসামির, জামিন ২১ জনের

দুখু মিয়া
দুখু মিয়া

গত ২২ এপ্রিল দিনদুপুরে খুন হন রাজধানীর বাড্ডার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই কামরুজ্জামান ওরফে দুখু মিয়া (৩২)।

চাঞ্চল্যকর এই খুনের মামলায় ১৪ দিনেও এজাহারভুক্ত ২৭ আসামির কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে না পারলেও এঁদের মধ্যে ২৪ জন আজ সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম) আত্মসমর্পণ করেন। এর মধ্যে এজাহারে নাম থাকা ২১ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে আর কারাগারে পাঠানো হয়েছে তিন আসামিকে। ঢাকার মহানগর হাকিম মো. খুরশিদ আলম এ আদেশ দেন।

হাকিম আদালত থেকে এজাহারে নাম থাকা এত আসামির জামিনে বিস্মিত মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির ভাই জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন,‘যাঁদের বিরুদ্ধে খুনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাঁদের জামিন হয়ে গেল; অথচ পুলিশ কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারল না।’

অবশ্য বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী দাবি করছেন, মামলা হওয়ার পর থেকে আসামি ধরার জন্য তাঁরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। থানা-পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, র‍্যাবও এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, এজাহারের বাইরে থাকা দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁরা এখন কারাগারে আছেন।
হাকিম আদালত থেকে খুনের মামলার এতজন আসামির জামিন পাওয়ার খবরটি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু জানেন না। আবদুল্লাহ আবু প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অসুস্থ। আদালতে আজ যাননি। আগামীকাল আদালতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।

আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করেন আইনজীবী আবু সাঈদ। জামিনের ব্যাপারে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এসব আসামির নাম এজাহারে থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই—এ কথাই তিনি আদালতকে বলেছেন।
জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয় সাংসদ রহমতুল্লার ভাগনে ফারুক আহম্মেদ ও আইয়ুব আনসারী এবং মারুফ আহম্মেদকে। মারুফ ফারুকের চাচাতো ভাই।

মামলার এজাহারে বলা হয়, কামরুজ্জামানকে হত্যার জন্য আসামি আইয়ুব আনসারী শটগান দিয়ে গুলি করেন। এ সময় কামরুজ্জামান গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। আর আসামি মহসিন কবির হত্যার জন্য খুব কাছ থেকে কামরুজ্জামানের মাথায় গুলি করেন। তখন তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর আসামি মারুফ আহম্মেদ ও এমদাদ হোসেন তাঁদের হাতে থাকা শটগান দিয়ে কামরুজ্জামানের পিঠে গুলি করেন।

বাড্ডায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মামলায় বলেন, গুলি করার সময় আসামিরা বেশ কয়েকবার ফোনে এক নম্বর আসামি ফারুক আহম্মেদের সঙ্গে কথা বলেন। বারবার বলতে থাকেন, তাঁর (ফারুক) নির্দেশে কাজ হচ্ছে, একজনকে শেষ করেছেন, বাকিদেরও শেষ করবেন।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কোনো অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ২১ আসামির জামিন হওয়ায় মামলা শেষ হয়ে যায়নি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র জব্দ করা হবে। যে তিন আসামি কারাগারে গেছেন, তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারও করা হবে।

নিহত কামরুজ্জামানের ভাই জাহাঙ্গীরের অভিযোগ করেছিলেন, সাংসদ রহমতুল্লাহ নিজের ছেলেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর করতে চেয়েছিলেন, তাতে তিনি (জাহাঙ্গীর) বাগড়া দেওয়ায় গত জানুয়ারি থেকে তাঁদের বিরোধ শুরু হয়। সেই বিরোধের জেরে জাহাঙ্গীর ও তাঁর পক্ষের লোকজনের ব্যবসাতেও বাধা দেওয়া হচ্ছিল। এসব নিয়ে মামলা এবং জিডিও করেছেন তাঁরা। ১৩ এপ্রিল ব্যবসায় বাধা দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে জিডিও করেছিলেন নিহত কামরুজ্জামান। সাংসদের বিরুদ্ধে বাজারদরের তিন ভাগের এক ভাগ দামে মসজিদের জমি কেনারও অভিযোগ করেন তিনি।

তবে সাংসদ রহমতুল্লাহ জাহাঙ্গীরের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি গত ২৩ এপ্রিল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গুলশানে একটি সরকারি বাড়িতে থাকেন। জীবনে চারবার সাংসদ হয়েছেন, একবারও সরকারি প্লটের আবেদন করেননি। জমির প্রতি তাঁর কোনো লোভ নেই। মসজিদের জমি কম টাকায় কেনার কোনো প্রশ্নই আসে না।