বিএনপি খুলনা সিটি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলছেন, তাঁরা জেনেছেন, বিভিন্ন সংস্থার মাঠ জরিপ থেকে সরকার জেনেছে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী বড় ব্যবধানে হারবেন, যার প্রভাব পড়বে সাত মাস পর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, যা ক্ষমতাসীনদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। তাই হার নিশ্চিত জেনেই এই নির্বাচন থেকে সরকারি দল পিছু হটেছে। দলীয় লোককে দিয়ে আদালতে রিট করিয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, এই সরকার সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শুধু সিটি নয়, যেকোনো নির্বাচনেই তাদের ভরাডুবি হবে। এটা জেনেই তারা নির্বাচন থেকে পিছু হটছে।’

এর আগে বিএনপির নেতারা বলে আসছিলেন, সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। এখন বিএনপির নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মুখোমুখি হতে সরকারের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, তার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে গাজীপুরে। এভাবে নির্বাচনকে পাশ কাটানো বা নির্বাচনে পিছু হটাকে সরকারের একটি বড় নৈতিক পরাজয় মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা।

গতকাল সোমবার বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিনজন নেতার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের দাবি, গাজীপুরের আগে গত জানুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন আটকে দেওয়া হয়েছিল সরকারের ইচ্ছায়। কারণ, সরকারের সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য ছিল, ওই সময়ে রাজধানী ঢাকায় নির্বাচন হলে তাদের প্রার্থী হারবে। এ কারণে নির্বাচন স্থগিত করে সরকার ঝুঁকি এড়িয়েছে। কিন্তু গাজীপুরের নির্বাচন নিয়েও যে একই কাণ্ড ঘটতে পারে, সেটা বিএনপির নেতাদের ধারণায় ছিল না।

বিএনপির নেতারা মনে করেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনও স্থগিত হয়েছে সরকারের কারসাজিতে। কারণ, নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লা খানের আত্মীয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দুই সিটি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুই সিটিতে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হলে সরকারি দলের জনপ্রিয়তার বিষয়ে সবাই একটা ধারণা পেত।

খুলনা সিটি করপোরেশন ভবন । ফাইল ছবি
খুলনা সিটি করপোরেশন ভবন । ফাইল ছবি

এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায়ও বিএনপি হতাশ ও ক্ষুব্ধ। দলটি মনে করে, নির্বাচন কমিশন তার ভূমিকা রাখছে না বা রাখতে পারছে না। বিশেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিএনপি গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছিল। এমনকি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাও নির্বাচন কমিশনে একই ধরনের বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব প্রথম আলোকে বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশনকে একটি হাস্যকর বস্তুতে পরিণত করেছে। এভাবে যদি হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে এই রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, অনেকের মধ্যে প্রশ্ন এসে গেছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দী অবস্থায় দুই সিটি নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। এখন তাঁদের আশঙ্কা এই ভেবে যে গাজীপুরের পর খুলনাকে নিয়ে সরকার কোনো দুরভিসন্ধি করে কি না। সেখানে সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বড় ব্যবধানে হারবেন বলে মনে করে বিএনপি। কারণ, সব বিবেচনায় খুলনায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর অবস্থান ভালো। প্রার্থী নজরুল ইসলামের ব্যক্তি জনপ্রিয়তা আছে। দলও সাংগঠনিকভাবে গোছানো। অভ্যন্তরীণ বিরোধ নেই। জামায়াতে ইসলামীরও সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট আছে। তারাও বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে।

এখন বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে খুলনায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশি করে পাঠানো। সেখানে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। দলের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এক ডজনের বেশি নেতা ধারাবাহিকভাবে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদি আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, শাহাজাহান ওমর, মো. শাহজাহান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও নিতাই রায় চৌধুরী; যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী পর্যায়ক্রমে নির্বাচনী প্রচারে কাজ করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাজীপুরের মতো খুলনায়ও ধানের শীষের পক্ষে ঢেউ উঠেছে। গাজীপুর যেহেতু বন্ধ, আমাদের আরও নেতা খুলনা যাবেন। খুলনায় সরকারি দলের জেতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’ তাঁর দাবি, গাজীপুর ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত হওয়াটা একই সূত্রে গাঁথা। তাই খুলনায়ও ভোট বন্ধ করে দেওয়াটা সরকারের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়।

আরও পড়ুন ...