রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে ভারতকে আহ্বান

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রাণ হস্তান্তর করছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ছবি: সৌরভ দাশ
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রাণ হস্তান্তর করছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ছবি: সৌরভ দাশ

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের ১ নম্বর জেটিতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠানো ত্রাণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। 

রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানোয় ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘ভারত সব সময় আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমাদের সাহায্যে সব সময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

ত্রাণমন্ত্রী মায়া বলেন, ‘সাহায্য দিয়েই কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। এর জন্য ভারতের একটি বিশেষ ভূমিকা আমরা আশা করব। সাহায্য থেকে বেশি প্রয়োজন, মিয়ানমার থেকে আগত বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সসম্মানে যেন ফিরিয়ে দেওয়া। কারণ, তারা মিয়ানমারের নাগরিক, তাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।’

ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে চাই। আপনারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার থেকে আগত বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সার্বিকভাবে সহযোগিতা কামনা করছি। একদিকে সাহায্য চাই, আরেক দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সব ধরনের চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানাই।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে মিয়ানমার থেকে ১২ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে ১১ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ জনকে নিবন্ধন করতে সক্ষম হয়েছি। ৩০টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ৩৬ হাজার ৩৭৩ এতিম শিশুকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে অল্প সময়ে ৯ কিলোমিটার বিদ্যুতায়ন, ১৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক হয়েছে। পানির জন্য ১০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে।’

এই জাহাজে করে ভারত থেকে এসেছে ত্রাণসামগ্রী। ছবি: প্রথম আলো
এই জাহাজে করে ভারত থেকে এসেছে ত্রাণসামগ্রী। ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পের চিত্র তুলে ধরে মায়া বলেন, ‘সেখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা জ্বালানি-সংকট। পাহাড়ে গাছপালা নেই বললেই চলে। গাছ কাটা হয়েছে, তারপর ডালপালা, তারপর গাছের গোড়া পর্যন্ত তুলে ফেলা হয়েছে। বলতে গেলে পাহাড়ে আকাশ একেবারে শূন্য বলা চলে। ভারত ২৫ হাজার স্টোভ দিয়ে কেরোসিন তেল দিয়ে তাদের রান্নার ব্যবস্থা করে দেবে বলেছে। হয়তো দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছাবে। এতে রোহিঙ্গাদের জ্বালানি সমস্যা হয়তো দূর করতে পারব।’

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় ত্রাণের মধ্যে থাকা রেইনকোট ও গামবুট বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের চলাফেরার জন্য ভালো হবে। যেসব এতিম শিশু রয়েছে, তাদের জন্য শিশুখাদ্য বিতরণ করা হবে। সেখানে পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনকারী ৫০ হাজার পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আট-দশ হাজার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাহাড় ধস বা অতিবৃষ্টি যেকোনো মুহূর্তে হতে পারে, তাহলে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।

ত্রাণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘বাংলাদেশে যে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলা করতে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এই বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাদেরকে সহায়তা করতে বাংলাদেশের ভূমিকা অসাধারণ। এ কাজ আন্তর্জাতিক মহলে সমর্থন পাওয়ার যোগ্য।’

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমাদেরও প্রচেষ্টা, যেন এই বাস্তুচ্যুত মানুষ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। এ কারণে আমরা রাখাইন রাজ্যে কম খরচে বাসস্থানসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক সুবিধা নিশ্চিতকরণে কাজ করছি; যা শরণার্থীদের নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবর্তন সহজতর করবে।’

ত্রাণ ৩৭৩ মেট্রিক টন
ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দর থেকে আসা ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ‘ঐরাবত’ মোট ৩৭৩ মেট্রিক টন ত্রাণ নিয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাহাজটিতে ১০৪ মেট্রিক টন গুঁড়ো দুধ, ১০২ মেট্রিক টন শুঁটকি মাছ, ৬১ মেট্রিক টন শিশুখাদ্য, ৫০ হাজার রেইনকোট ও ৫০ হাজার জোড়া গামবুট রয়েছে। এ ছাড়া ১০ লাখ লিটার কেরোসিন তেল ও ২০ হাজার রান্নার চুলার আরেকটি চালান শিগগিরই আসবে বলে জানান ভারতীয় হাইকমিশনার। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রথম ধাপে দুই দফায় ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’-এর আওতায় ৯৮১ মেট্রিক টন ত্রাণ দিয়েছিল ভারত।

ত্রাণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম, বন্দরের পর্ষদ সদস্য জাফর আলম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন ও ঐরাবত জাহাজের কমান্ডার এ অশোক উপস্থিত ছিলেন।