খুলনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আওয়ামী লীগের

নির্বাচন কমিশন
নির্বাচন কমিশন

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারে সমান সুযোগ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি খুলনা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ করে বলেছে, ওই কর্মকর্তার অতীত কালিমালিপ্ত। তিনি একটি দলের ক্যাডার ছিলেন।

বুধবার আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করে এসব অভিযোগ তুলে ধরে। পরে প্রতিনিধিদলের নেতা প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। 

পরে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, খুলনায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহায়তা করার জন্য ইসি সচিবালয় থেকে একজন যুগ্ম সচিবকে পাঠানো হয়েছে।

নির্বাচন ভবনে বৈঠক শেষে এইচ টি ইমাম বলেন, তাঁরা খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে ইসির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ওখানকার রিটার্নিং কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা, প্রচারণা—সবকিছু মিলিয়ে তাঁরা দেখছেন, সেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ নেই। তাঁরা ইসিকে বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান আরপিও চলে না। ক্ষমতাসীন দলের অনেক বড় নেতা সাংসদ হওয়ায় তাঁরা নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। অন্য দলের সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এর ফলে অসমতল অবস্থা তৈরি হয়েছে। এটি প্রতিকার করা দরকার। ইসি বলেছে, তারা ভেবেচিন্তে দেখবে কী করা যায়।

এইচ টি ইমাম বলেন, একসময় সন্ত্রাসের জনপদ বলে পরিচিত ছিল খুলনা। এখন সুযোগ বুঝে দলের ছত্রচ্ছায়ায় ঢুকে পড়ছে। এদের সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটা দেখতে বলেছেন।

এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আমরা চাই, ইসি তার ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। আরও শক্তিশালী হোক। ইসিকে শক্তিশালী করতে যতগুলো আইন, সব হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। আমরা চাই এসবের প্রয়োগ হোক।’

খুলনা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট। তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেগুলো অনেক কিছু আপত্তিকর। তাঁরা এটা ইসিকে বলেছেন। ইসি বলছে, পদক্ষেপ নিয়েছে। একজন সিনিয়র অফিসারকে নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপরে।

এইচ টি ইমাম বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, অত্যন্ত শক্তিশালী দলীয় ক্যাডার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি আচার-আচরণ, কথাবার্তায় এখনো সে রকম ব্যবহার করছেন।

ওই রিটার্নিং কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদের জামাতা—এ বিষয়ে জানতে চাইলে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আমরা আত্মীয়তা নিয়ে কিছু বলব না। কে কার আত্মীয় কার জামাই বা ভাইবোন এসব বিষয় নয়। বিষয় হলো তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ কী। যদি এ রকম হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি তাঁর আস্থা নেই। যদি এমন হয় তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনার বিরোধী, তাহলে আপনি কী বলবেন?’

এক প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, তাঁরা আগেও এ কর্মকর্তার বিষয়ে ইসিকে সতর্ক করেছিলেন। ২০০২-২০০৩ সালে হাওয়া ভবনের তালিকা থেকে সরাসরি ৩০০ শতাধিক কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিল ইসি। পরে তৎকালীন সিইসি পরীক্ষা নিয়ে অনেককে বাদ দিয়েছিলেন। এরপরও যাঁরা একেবারে গোঁড়া, যাঁরা শিবিরের কাজ করতেন বা স্বাধীনতাবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন, তাঁদের বাছাই করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংবিধানের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন না।

তবে এইচ টি ইমাম বলেন, তাঁরা এখন ওই কর্মকর্তার প্রত্যাহার চাইছেন না। তাঁরা চান রিটার্নিং কর্মকর্তা আইন অনুযায়ী কাজ করবেন। পক্ষপাত করবেন না।
দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিএনপির অভিযোগ প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, তাদের অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, প্রত্যেকে চিহ্নিত দাগি আসামি। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলা আছে।

পরে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছে খুলনায় লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড হচ্ছে না। কারণ ওখানে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা যেতে পারছেন না। কিন্তু বিপরীতে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারা দলে দলে ওখানে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

সচিব বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহায়তা করা, যাতে ভুলভ্রান্তি না করে, এ জন্য ইসি থেকে একজন যুগ্ম সচিব ওখানে পাঠানো হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে আর ভুলভ্রান্তি না হয়। নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করতে পারে।