বজ্রপাতে নিহত ১৮ জনের ১৬ জনই কৃষক, ধান কাটতে হাওরে যেতে ভয়

হবিগঞ্জে বজ্রপাতের ঘটনায় আজ বুধবার ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ দিনে এই জেলায় বজ্রপাতের ঘটনায় ১৮ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জনই কৃষক ও ধানকাটা শ্রমিক। বজ্রপাতে প্রাণ হারানোর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগে কৃষিজীবীরা। 

আজ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলায় ধান কাটার সময় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় ছয়জন ধানকাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহত শ্রমিকেরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার বলাকিপুর গ্রামের নারায়ণ পাল (৪৪), একই উপজেলার আমড়াখাই গ্রামের আবু তালিব (৩৭), মাধবপুর উপজেলার পিয়াইম গ্রামের জহরলাল সরকার (৪৫), লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের চকি মিয়া (৫০), সুনামগঞ্জের ধাইপুর গ্রামের স্বপন দাস (৩৪) এবং সিরাজগঞ্জ জেলার জয়নাল মিয়া (৩০)।

গতকাল মঙ্গলবার নবীগঞ্জের একটি হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে প্রাণ হারান সুজন মোড়া (২৭)। একই দিন বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর হাওরে বজ্রপাতে মারা যান কৃষক জুবাইল মিয়া (২৫)। গত শুক্রবার বানিয়াচং উপজেলার মুড়ারআব্ধা হাওরে বজ্রপাতে প্রাণ হারান কৃষক রণবীর চন্দ্র দাস (৪৫)। বাহুবল উপজেলার গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরে কৃষক মো. আবুল কালাম (৩৫) এবং একই দিনদুপুরে চুনারুঘাট উপজেলার তাউসি গ্রামের হেনা বেগম (৩৪) বজ্রপাতে মারা যান।

এ ছাড়া বানিয়াচং উপজেলায় ২ মে বজ্রপাতে তিনজন, গত ৩০ এপ্রিল একজন, গত ২২ এপ্রিল লাখাই উপজেলায় দুজন এবং বানিয়াচংয়ে একজন মারা যান।
বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং, লাখাই, নবীগঞ্জ ও চুনারুঘাট থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)।

বজ্রপাতে নিহত হওয়ার প্রায় সব ঘটনা ঘটেছে খোলা মাঠে, ফসলের খেতে। আর এ কারণে এখন ফসলের খেতে যেতে ভয় পাচ্ছেন কৃষকেরা।

বানিয়াচং উপজেলার মকা গ্রামের কৃষক রমজান মিয়া বলেন, এ এলাকায় এমনিতে ধানকাটা শ্রমিকের সংকট। আবার প্রতিদিন বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন কৃষকেরা। বজ্রপাত নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকেরা।

আজমিরীগঞ্জের বদলপুর গ্রামের কৃষক অনুকূল দাস বলেন, বজ্রপাতের ভয় নিয়ে প্রতিদিন ধান কাটতে হাওরে যেতে হচ্ছে। ধান কাটার কাজ শেষ না হলে আগাম বন্যায় ফসলের ক্ষতি হতে পারে।

হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সব সময়ই কৃষকদের বজ্রপাতের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে হাওরে যেতে বলা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে কৃষকের মধ্যে ধান কাটা শেষ করার তাড়া থাকায় তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে হাওরে যান। এ কারণে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।