রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যা বললেন শান্তিতে নোবেলজয়ী তাওয়াক্কল

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তাওয়াক্কল কারমান
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তাওয়াক্কল কারমান

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছেন ইয়েমেনের শান্তিতে নোবেলজয়ী তাওয়াক্কল কারমান। তিনি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল, দুঃখজনক হলেও সত্য, তা তারা করেনি।’

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) আয়োজিত এক সিম্পোজিয়ামে এসব কথা বলেন ২০১১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তাওয়াক্কল কারমান। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের র‍্যাডিসন ব্লু ভিউ হোটেলের মোহনা মিলনায়তনে ‘টিকে থাকার জন্য টেকসই উন্নয়ন : একটি ন্যায়সংগত পৃথিবী গড়তে চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এ সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এইউডব্লিউয়ের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমদ ও উপাচার্য নির্মলা রাও।

সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইয়েমেনের তাওয়াক্কল কারমান বলেন, ‘দুই মাস আগে নোবেল বিজয়ী শিরিন এবাদিসহ আমি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছি। ওই সময় প্রায় এক শ নারীর কথা শুনেছি। তাঁদের প্রায় সবাই বলেছেন, তাঁদের চোখের সামনেই তাঁদের মা-বাবা, ভাইবোন ও সন্তানদের জবাই করে, গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ওপর যা হয়েছে তা গণহত্যা।’

গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে মানবাধিকারকর্মী তাওয়াক্কল কারমান বলেন, উন্নয়ন ছাড়া শান্তি আসে না। শান্তি ছাড়া উন্নয়ন হয় না। তিনি বলেন, প্রত্যেক স্বৈরশাসকই একজন সন্ত্রাসী। আবার প্রত্যেক সন্ত্রাসীই একজন স্বৈরশাসক। তাঁরা এক অপরকে সহায়তা করে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নীরবতার কারণে বিশ্ব অবনতিশীল পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বিশ্বের পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এইউডব্লিউয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ‘উইমেন জার্নালিস্টস উইথ আউট চেইনস’–এর সভাপতি তাওয়াক্কল কারমান। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে ধনী দেশগুলোকে সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি।

সংঘাতে যৌন সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন সিম্পোজিয়ামে বলেন, যৌন নির্যাতন একধরনের যুদ্ধাপরাধ। জাতিগত সহিংসতার সময় সংঘটিত যৌন নির্যাতনকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। তিনি বলেন, সমাজের নীরবতার কারণে যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়ে চলছে। যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে একসঙ্গে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় অবশ্যই আনতে হবে।

নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের এ বিশেষ প্রতিনিধি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না অভিযোগ করে প্রমিলা প্যাটেন বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য শুধু সীমান্তই খুলে দেয়নি, আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তা দিয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক সংকট। এই সংকট উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যেতে হবে আন্তর্জাতিক মহলকে।

মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৮১ হাজার নারী এখন অন্তঃসত্ত্বা উল্লেখ করে প্রমিলা প্যাটেন বলেন, এসব নারীর পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতনতা নেই। একধরনের সংস্কার থেকে তাঁরা শারীরিক অবস্থার বিষয়টিও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে গোপন রাখতে চান। তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী নারীরা মিয়ানমারের সেনাসদস্যদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে আমাকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাঁদের (মিয়ানমারের সেনাসদস্য) কাউকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।’

সিম্পোজিয়ামের অন্যতম আলোচক বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সেরাগেল্দিন বলেন, ধনী দেশগুলো শরণার্থীদের জন্য তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু জর্ডানের মতো ছোট দেশগুলো বিপুলসংখ্যক শরণার্থী আশ্রয় দিয়েছে। শরণার্থী সংকট সমাধানের জন্য সবাইকে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইজ্জেলদিন আবুলাইশ বলেছেন, পৃথিবীব্যাপী নারী ও শিশুদের ওপর যে সহিংসতা, তা মনুষ্যসৃষ্ট। এটি বন্ধ করতে হবে।

এদিকে রেডিসন ব্লু ভিউ হোটেলে শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে।