বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাঙচুরের পর এলাকা রণক্ষেত্র

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বহনকারী বাসে অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নগরের পুলিশ লাইনস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগ ওই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

কুমিল্লা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুমিল্লা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরাও যোগ দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তখন প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। এ ঘটনার জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পরস্পরকে দায়ী করেছেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাসে হামলার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ১৩ মে, কুমিল্লা। ছবি: এমদাদুল হক
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাসে হামলার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ১৩ মে, কুমিল্লা। ছবি: এমদাদুল হক

শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার বিকেল পাঁচটায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী বহনকারী একটি বাস নগরের ফৌজদারি মোড়ে যাচ্ছিল। বাসটি বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে কুমিল্লা সরকারি কলেজ-সংলগ্ন পুলিশ লাইনস এলাকা পার হচ্ছিল। ওই সময়ে কুমিল্লা সরকারি কলেজ শাখা ও মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বাসটি থামান। তখন শিক্ষার্থীদের বাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা দিয়ে পুরো বাসের দরজা-জানালা ও সামনের কাচ পুরোপুরি ভেঙে ফেলেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তখন উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কুমিল্লা সরকারি কলেজের ভেতর ঢুকে পড়েন। এ সময় বিক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলেজে গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। একই সময়ে পুলিশ লাইনস এলাকার কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। শিক্ষার্থীদের বাসে ভাঙচুরের ঘটনা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়লে নগরের ঝাউতলা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বাসে হামলা চালানো হয়। তখন ক্যাম্পাস থেকে শহরগামী অন্যান্য রুটের আরও চারটি বাস সড়কের মধ্যে থেমে যায়। তখন নগরের বিভিন্ন সড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাইনস এলাকায় পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশ লাইনস এলাকার পশ্চিম পাশে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কুমিল্লা সরকারি কলেজ ফটকের ভেতর মুখোশ পরে লাঠিসোঁটা ও রড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন ককটেলের বিস্ফোরণ হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তিনটি কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ভাঙচুর করা বাসটি পুলিশ লাইনসে নেওয়া হয়।

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। কুমিল্লা, ১৩ মে। ছবি: এমদাদুল হক
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। কুমিল্লা, ১৩ মে। ছবি: এমদাদুল হক

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম হানিফ বলেন, ‘রোববার দুপুরে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে গেলে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। এ সময় আমাদের তিনজন আন্দোলনকারীকে চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়। পরে কর্মসূচি না করেই আমরা চলে আসি। পুলিশ লাইনের ঘটনায় ছাত্রলীগের সরকারি কলেজ ও মহানগরের কয়েকজন নেতা এ হামলার সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনার বিচার চাই। কোটা সংস্কার আন্দোলন করার কারণেই বাস ভাঙচুর ও অতর্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। পুলিশ ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’

তবে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বলেন, পুলিশ কারও পক্ষ নেয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য কর্তব্য পালন করেছে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস ভাঙচুর করেন। কুমিল্লা, ১৩ মে। ছবি: এমদাদুল হক
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস ভাঙচুর করেন। কুমিল্লা, ১৩ মে। ছবি: এমদাদুল হক

অভিযোগ প্রসঙ্গে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈমুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গামী বাস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সকালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা কোটার পক্ষে কান্দিরপাড়ে মানববন্ধন করে। ছাত্রলীগ সেখানে কারও ওপর হামলা করেনি।

তবে শিক্ষার্থী বহনকারী বাসের চালক আফজল মিয়া চৌধুরী বলেন, বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে বাসটি পুলিশ লাইন এলাকায় এলে একদল ছেলে এসে বাস থামাতে বলে। এরপর শিক্ষার্থীদের বাস থেকে নেমে যেতে বলে। না নামাতে অতর্কিত পুরো বাস ভাঙচুর করা হয়।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে অতর্কিত হামলা হয়েছে। কারা হামলা করেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এর আগে ৯ মে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর এলাকায় আন্দোলনকারীদের মানববন্ধন করতে দেয়নি পুলিশ ও মহানগর ছাত্রলীগ। রোববারও কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়লে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কুমিল্লা, ১৩ মে। ছবি: এমদাদুল হক
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়লে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কুমিল্লা, ১৩ মে। ছবি: এমদাদুল হক