'মাদক-ভূত' তাড়াতে পারবেন তাঁরা?

খুলনা সিটি করপোরেশন ভবন । ফাইল ছবি
খুলনা সিটি করপোরেশন ভবন । ফাইল ছবি

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে শহরকে মাদকমুক্ত করার দাবি জোরেশোরে উঠেছে। মেয়র আর কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাও ওয়ার্ডগুলোকে মাদকমুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। তবে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে নাম আছে—এমন কয়েকজনও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরাও একই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

দেশজুড়ে মাদক এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে। খুলনা নগরও এর বাইরে নয়। ১৫ মের সিটি নির্বাচন উপলক্ষে পাঁচ মেয়র পদপ্রার্থীর সবাই তাঁদের ইশতেহারে মাদকমুক্ত নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্তত পাঁচটি ‘জনগণের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে জনগণের প্রশ্নের জবাবেও তাঁরা মাদক সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তবে খুলনার সাধারণ ভোটার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রশ্রয় পেয়ে থাকেন। প্রার্থীরা এ ধরনের প্রতিশ্রুতি সব সময় দিয়ে থাকেন। আসলে সরষের মধ্যে ভূত থাকলে সেই ভূত তাড়ানো কঠিন কাজ। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, মাদকের ব্যবহার, ব্যবসা ও চোরাচালানের পুরো চেইনটা ভাঙা তাঁদের (প্রার্থীদের) জন্য কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক নির্বাচনী ইশতেহারের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গণসংযোগকালে মাদকের বিরুদ্ধে নগরবাসীকে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন। বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুও নির্বাচনী ইশতেহারে মাদক সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া মাদকমুক্ত করা সম্ভব নয়। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনে করেন, খুলনায় মাদক সমস্যা বিপজ্জনক পর্যায়ে আছে। তিনি মনে করেন, এই ব্যবসার সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জড়িত। ছাত্র, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকমুক্ত নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, কোনো জনপ্রতিনিধি একা এ সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। নির্বাচিত মেয়র একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন। তাঁদের সহযোগিতা করবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা ও সামাজিক নেতারা।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ও বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ফাইল ছবি
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ও বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ফাইল ছবি

তালুকদার খালেকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী এস এম কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আসলে আমরা যাঁরা রাজনীতি করি, তাঁদের উচিত সর্বস্তরে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।’

নগরের একজন নতুন ভোটার বলেন, প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা যাঁদের নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যেই অনেকে মাদক ব্যবসা কিংবা সেবনের সঙ্গে জড়িত। তাই প্রার্থীদের দেওয়া মাদকমুক্তির প্রতিশ্রুতি তাঁর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, এ ওয়ার্ডের কিছু জায়গায় মাদকের ছড়াছড়ি আছে। মাদকের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষে কোনো দলের না। এরা ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয় লাভ করতে চায়। ওয়ার্ড ও শহর মাদকমুক্ত হোক, তিনি সেটাই চান। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াহেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মাদকের প্রভাব তাঁর ওয়ার্ডে এখনো আছে। নির্বাচিত হলে তিনি বড় পরিসরে এ নিয়ে কাজ করবেন।

প্রার্থীরা মন থেকে চাইলেই মাদক সমস্যা দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সম্পাদক কুদরত-ই–খুদা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যারা মাদক ব্যবসা করে, তাদের অনেকেই কোনো না–কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। তাই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা শহরকে মাদকমুক্ত করার কথা বললে সেটা ‘ভূতের মুখে রাম নামে’র মতো শোনায়।