ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে দুই কেন্দ্রে, আজ হলো 'মক ভোট'

খুলনার সোনাপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইভিএমে মক ভোটের আয়োজন করা হয়। ২৪ নম্বর ওয়ার্ড, খুলনা সিটি, ১৪ মে। ছবি: সাজিদ হোসেন
খুলনার সোনাপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইভিএমে মক ভোটের আয়োজন করা হয়। ২৪ নম্বর ওয়ার্ড, খুলনা সিটি, ১৪ মে। ছবি: সাজিদ হোসেন

ভোটের আগের দিনই ভোটকেন্দ্রে ভোটার! ভোট দিতে এসেছেন। একটি মেশিনে হাতের বুড়ো আঙুলের ছাপ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মেশিনটির স্ক্রিন এবং কক্ষের দেয়ালে ভেসে উঠল ভোটারের ছবি, ভোটার নম্বর ইত্যাদি। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং কক্ষে উপস্থিত সবাই দেখলেন ভোটারের বিস্তারিত। এরপর ভোটার চলে গেলেন ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষে। সেখানে রয়েছে আরেকটি মেশিনের প্যানেল। সেই প্যানেলে রয়েছে তিনটি ভাগ। এক ভাগে মেয়র প্রার্থী, অন্য দুই ভাগে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম-প্রতীকের তালিকা। প্যানেলে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। 

খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের (কেসিসি) ভোট কাল মঙ্গলবার। ভোটের আগের দিন আজ সোমবারই সেই ভোটের প্রস্তুতি নিতে ‘মক ভোটের’ আয়োজন করেছিল নির্বাচন কমিশন। সিটির নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)  ভোট হবে। ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি দেখাতে দুটি কেন্দ্রেই আজ আয়োজন হলো মক ভোটের।

দুপুরে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে মক ভোটের করা হলো। ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসা এক ভোটার ইসমত আরা ইভিএম নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। ভোট দেওয়া খুব সহজ মন্তব্য করে তিনি বললেন, ‘এখন শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তাই ইভিএমে ভোট দেওয়া কারও জন্যই কঠিন হবে না।’

খুলনায় দুটি কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে। একটি ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপোতা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। অন্যটি ২৭ নম্বর ওয়ার্ডর পিটিআই জসীমউদ্‌দীন হল কেন্দ্র। সোনাপোতা কেন্দ্রে ১ হাজার ৯৯ জন নারী ভোটার ও পিটিআই কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৭৯ জন পুরুষ ভোটার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেবেন।
আজকের ‘মক ভোটে’ প্রতীক ছিল টিউবওয়েল, মগ, নোঙার, প্রজাপতি, চাঁদ। এসব প্রতীকের কোনোটিই সিটির নির্বাচনে মেয়র বা কাউন্সিলর পদে ব্যবহার করা হয়নি।

যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট দেওয়াটা সবার কাছে নতুন। অনেকের কাছে বিষয়টি ভীতিকরও ছিল। এমন একজন চায়ের দোকানি আরিফুর রহমান। ভোট দেওয়ার পর অবশ্য তাঁর ভয় কেটে গেছে। আরিফুর রহমান বলছিলেন, ‘আমাগের জন্যি বিষয়ডা কঠিন। তবে ভোট দ্যাওয়ার পর ভালো লাগতিছে। কেউ দ্যাহায়ে দিলে সমস্যা হবে না।’

নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানালেন, এবার যে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো আগের তুলনায় অনেক আধুনিক। এতে কন্ট্রোল ইউনিট ও ব্যালট ইউনিট নামের দুটি অংশ থাকে। কন্ট্রোল ইউনিট থাকবে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সামনে। ব্যালট ইউনিট থাকবে ভোট দেওয়ার জন্য নির্ধারিত গোপন কক্ষে।

ভোট দেওয়া শেখাচ্ছেন এক নির্বাচন কর্মী। ২৪ নম্বর ওয়ার্ড, খুলনা সিটি, ১৪ মে। ছবি: সাজিদ হোসেন
ভোট দেওয়া শেখাচ্ছেন এক নির্বাচন কর্মী। ২৪ নম্বর ওয়ার্ড, খুলনা সিটি, ১৪ মে। ছবি: সাজিদ হোসেন

কন্ট্রোল ইউনিট ব্যবহার করা হবে ডিজিটালি ভোটার শনাক্ত করার কাজে। আঙুলের ছাপ, স্মার্ট কার্ড, আইডি নম্বর ও ভোটার নম্বরের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা সম্ভব। ভোটার ভোটকেন্দ্র আসার পর তাঁর আঙুলের ছাপ কন্ট্রোল ইউনিটে দেবেন। তখনই ভোটারের ছবিসহ অন্যান্য তথ্য কন্ট্রোল ইউনিট এবং ভোট কক্ষে রাখা প্রজেক্টরে দেখা যাবে। সব ঠিক থাকলে ওই ভোটার ভোট দিতে পারবেন। আঙুলের ছাপে কোনো সমস্যা থাকলে অন্য ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। স্মার্টকার্ড দিয়েও তথ্য বের করা যাবে। আইডি নম্বর ও ভোটার নম্বরের মাধ্যমেও কাজ করার সুযোগ থাকছে।

ব্যালট ইউনিটের ওপর প্রার্থীর নাম ও প্রতীক সাজানো থাকবে। প্রত্যেক প্রতীকের পাশে আছে একটি করে সুইচ। ভোটার তাঁর পছন্দের প্রতীকের পাশের সুইচ চাপলেই ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে থাকা লাল বাতি জ্বলে উঠবে। ভোট গৃহীত হলে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সামনে থাকা কন্ট্রোল ইউনিটের ডিসপ্লেতে একটি সংখ্যা যোগ হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, দুই দিন ধরেও সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়টি ভোটারদের দেখানো হয়েছে। আজ শেষ দিন ভোটকেন্দ্র চূড়ান্তভাবে তা দেখানো হলো।

নির্বাচন কমিশনের সূত্রটি আরও জানায়, ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন পুরোপুরি ইভিএমে হয়েছিল। এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়। এবারের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নয়টি ওয়ার্ডে ইভিএম ব্যবহার হয়। নরসিংদীতে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে উপনির্বাচন পুরোটাই হয় ইভিএম ব্যবহার করে। ওই সব নির্বাচনে যেসব ইভিএম ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে শুধু ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ডিজিটালি ভোটার শনাক্ত করার ব্যবস্থা ছিল না।

সূত্রমতে, নতুন ইভিএম সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রংপুর পৌরসভা নির্বাচনের একটি কেন্দ্র ব্যবহার হয়েছিল। নতুন এই মেশিনগুলো সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। শিগগিরই প্রায় আড়াই হাজার মেশিন আসবে নির্বাচন কমিশনের হাতে। এগুলোর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করে কমিশনের ভোটার আইডি অনুবিভাগ।