খুলনায় ভোটার উপস্থিতি ছিল কম

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নারী ভোটাররা। মানিকতলা আবু সুফিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা, ১৫ মে। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নারী ভোটাররা। মানিকতলা আবু সুফিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা, ১৫ মে। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে হয়েছে। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলে। এখন শুরু হয়েছে ভোট গণনা। এরপর পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রওয়ারি ফলাফল ঘোষণা করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। জানা যাবে কে হচ্ছেন খুলনার পরবর্তী নগরপিতা।

এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।

খুলনায় দুটি ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট নেওয়া হয়েছে। এ দুটি কেন্দ্রের ফলাফল এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ফল পেতে রাত হবে বলে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

দিনভর ভোটে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নানা অনিয়ম, অভিযোগ, ব্যালট পেপারে জোরপূর্বক সিল মারার ঘটনা ঘটেছে। আবার ভালো ভোটও হয়েছে অনেক কেন্দ্রে। খুলনা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বলছেন, ভোট ভালো হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী বলছেন, অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

সরকারি পাইওনিয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। সাউথ সেন্ট্রাল সড়ক, খুলনা, ১৫ মে। ছবি: প্রথম আলো
সরকারি পাইওনিয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। সাউথ সেন্ট্রাল সড়ক, খুলনা, ১৫ মে। ছবি: প্রথম আলো

অনিয়ম ও বুথ দখল করে ভোট দেওয়ার কারণে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুটি ভোটকেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হলো ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র (পুরুষ) ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্র। এ ছাড়া আরও অন্তত তিনটি কেন্দ্রে ভোট কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে বাধ্য হন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা।

খুলনায় ভোট নিয়ে শুরু থেকেই ছিল নানা শঙ্কা। তবে এই নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলাজনিত বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির একজন এজেন্ট সেলিম কাজীকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনা ঘটেছে।

খুলনার নির্বাচনে মেয়র পদে এবার পাঁচজন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক নৌকা এবং বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুজ্জাম্মিল হক হাতপাখা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে) এবং জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান (লাঙ্গল) মেয়র পদে লড়বেন।

মিয়াপাড়া রহিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। খুলনা, ১৫ মে। ছবি: সাজিদ হোসেন
মিয়াপাড়া রহিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। খুলনা, ১৫ মে। ছবি: সাজিদ হোসেন

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৫ জন নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। ভোট হবে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে। দুটি ওয়ার্ডের দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। সেখানে মেয়র প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক এবং সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীকে বোতাম চেপে ইভিএমে ভোট দেবেন ভোটাররা।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করার জন্য তাঁদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ২৪ জন পুলিশ ও আনসার। সাধারণ কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে থাকবে ২২ জন করে। এর বাইরে পুলিশের ১১টি স্ট্রাইকিং দল (প্রতিটিতে ১০ জন করে), ৭০টি ভ্রাম্যমাণ দল (প্রতিটি ৭ জন করে), ১৬ প্লাটুন বিজিবি, র‍্যাবের ৩২টি ভ্রাম্যমাণ দল, ৩১ জন নির্বাহী হাকিম এবং ১০ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচন কমিশন বলছে, খুলনায় মোট ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ (কমিশনের ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ)। আর ৫৫টি সাধারণ বা ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্র আছে।

লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের একপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ব্যালট পেপার ভর্তি ব্যালট বাক্স। খুলনা, ১৫ মে। ছবি: সাজিদ হোসেন
লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের একপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ব্যালট পেপার ভর্তি ব্যালট বাক্স। খুলনা, ১৫ মে। ছবি: সাজিদ হোসেন

আজ ভোট শুরুর পরই বিএনপির  প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু অনিয়মের নানা অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ৪০টি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। এজেন্টদের মারধরের কথাও বলেন তিনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বিএনপির অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছেন। তিনি বলেছেন, পরাজয় বুঝতে পেরে বিএনপি এসব কথা বলছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুচ আলী আজ বলেছেন, দু–একটি ঘটনা ছাড়া ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বিএনপির অভিযোগ সুস্পষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেছেন।


খুলনায় ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেক পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেক মেয়র নির্বাচিত হন।