মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা থেকে চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট চলছে। আজ মঙ্গলবার সকালে মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আবদুর রহমান ঢালী
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট চলছে। আজ মঙ্গলবার সকালে মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আবদুর রহমান ঢালী

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা থেকে চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৭ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যানজট চলছিল।

ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে ঢাকাগামী স্টার লাইন পরিবহনের বাসের চালক আহমেদ হোসেন বলেন, সকাল ১০টায় বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় চান্দিনার মাধাইয়া এলাকায় পৌঁছায়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁদের বাস ছিল দাউদকান্দিতে। মাধাইয়া থেকে দাউদকান্দিতে পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা যেতে তাঁদের পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগে যায়; যা অন্য সময় লাগে ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট।

দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকায় বাসের যাত্রী ছাগলনাইয়া সদরের ভালুয়া গ্রামের বৃদ্ধ শাহা আলম বাসের মধ্যেই পায়খানা করে দেন। এতে অন্য যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েন।

মাইঝদির সোনাপুর থেকে ঢাকাগামী হিমাচল পরিবহনের বাসের চালক ভাসান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে যানজটে আটকে থেকে গত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি ঠিকমতো ঘুমাতে ও ভাত খেতে পাচ্ছেন না।

ফেনীর যানজটের চাপ এবং বিশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচলের কারণে গত রোববার রাত সাড়ে আটটা থেকে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটটি ধীরে ধীরে আজ মঙ্গলবার ভোরে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকায় পৌঁছায়। সকালে হাইওয়ে ও থানা-পুলিশের তৎপরতায় যানজটটি কমে ২০ কিলোমিটারে আসে; কিন্তু সন্ধ্যায় তা বেড়ে ২৭ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়।

টানা যানজটে আটকে থেকে যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিপাকে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর মুন্সী ফজলুর রহমান সরকারি ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কয়েকজন বলে, আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে উপজেলার হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি কলেজ কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে যানজটে আটকা পড়ে ছয় কিলোমিটার পথ হেঁটে দৌড়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে হয়েছে তাদের।

শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, গ্রিন সেন্ট মার্টিন পরিবহন, এস আলম পরিবহন ও কাভার্ড ভ্যানের চালকেরা জানান, সোমবার রাত ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দাউদকান্দির হাসানপুরে যানজটে আটকে আছেন। অথচ যানজট না হলে চার ঘণ্টায় ঢাকার পৌঁছানোর কথা ছিল।

কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী এস আলম পরিবহনের বাসের চালক নাছির উদ্দিন বলেন, ‘এক সপ্তাহ যাবৎ শুধু গাড়িই চালাচ্ছি। ঘুমানোর সময় পাচ্ছি না। যাত্রীদের চাপে কাউন্টারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০ মিনিটের মধ্যে যাত্রী নিয়ে রওনা দিতে হয়। এ অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’

ঢাকার গাজীপুরের ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন বলেন, দাউদকান্দি থেকে ঢাকায় রওনা দিয়ে ১১ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছেছি। ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, রমজান সামনে রেখে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে হাইওয়ে ও থানা-পুলিশ দিনরাত প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে।