খুলনায় নৌকায় ভোট পড়ার কারণ জানালেন কাদের

ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের জয়ের নেপথ্য কারণ জানালেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন-অর্জনের কারণে জয় এসেছে। সমুদ্র ও সীমান্ত বিজয় হয়েছে। পারমাণবিক ক্লাবে যোগ দেওয়া এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে ঐতিহাসিক সাফল্যের কারণে মানুষ নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন।

আজ বুধবার রাতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি জনগণের মতকে মিসলিড (ভুলপথে চালিত করা) করেছে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে বিএনপির শিক্ষা নেওয়া উচিত।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নানা অভিযোগের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, খুলনা সিটি নির্বাচনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ দিয়ে কেন্দ্র দখলের কোনো অভিযোগ আসেনি। এগুলো বিএনপির মনগড়া অভিযোগ। তিনি বলেন, ১০০টি নির্বাচন কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বিএনপি অহেতুক অভিযোগ দিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন জবাব দিয়েছে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষকেরা ছিলেন, সাংবাদিকেরা ছিলেন—তাঁরা কেউ অভিযোগ দিলেন না। বিএনপি একা অভিযোগ করে যাচ্ছে।

কূটনীতিকদের কাছে সরকারবিরোধী নালিশ ছাড়া বিএনপির কাজ নেই
গুলশানে আজ মঙ্গলবার রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার জনগণের চোখে ধুলা দিয়েছে। এ ছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিবের মন্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এগুলো নির্জলা মিথ্যাচার। নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিএনপি পাগল-উন্মাদের মতো মিথ্যাচার করছে। বিএনপির জন্য সামনে আরও বড় বড় হার অপেক্ষা করছে। খুলনা থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির বসে বসে মিথ্যাচার করা ছাড়া কোনো প্রোঅ্যাকটিভ (পরিবর্তনের জন্য কাজ করা) কাজ নেই। কূটনীতিকদের কাছে সরকারবিরোধী নালিশ দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই।

খুলনা সিটি নির্বাচন বিষয়ে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, খুলনা নির্বাচন থেকে বিএনপির শিক্ষা নিতে হবে। অতীতের নির্বাচনের খুলনার অন্যান্য জায়গায় আওয়ামী লীগ জিতলেও সিটিতে জেতার হার কম। সেই সিটিতেও আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন-অর্জনের কারণে এই জয় এসেছে। সমুদ্র-সীমান্ত বিজয়। পারমাণবিক ক্লাবে বাংলাদেশের যোগ দেওয়া এবং সর্বশেষ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মতো ঐতিহাসিক সাফল্যের কারণে মানুষ নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করেছে।

জিতলেও অভিযোগ করতে থাকে বিএনপি
বিএনপির প্রতি অভিযোগ করে মন্ত্রী কাদের আরও বলেন, মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে? তাদের ক্ষমতায় থাকার সময়ের এমন কোনো দৃষ্টান্ত আছে যে মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে? ভোট আদায়ের মতো অতীতে কোনো কাজ বিএনপি দেখাতে পারেনি। ইচ্ছামতো সরকারবিরোধী বক্তব্য দেয় বিএনপি। এগুলো কি জনগণ বোঝে না? এসব দেখে কি জনগণ ভোট দেবে? তিনি আরও বলেন, বিএনপি ভোট শুরু হওয়ার পর থেকে ফল ঘোষণা পর্যন্ত ভোট চুরি, লুট, ডাকাতি এবং ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ করতে থাকে। নিজেরা জিতলেও বিএনপি অভিযোগ করতে থাকে। অথচ বিএনপিই এ নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করেছিল।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদেরের সংবাদ সম্মেলন চলার সময় খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গণনা চলছিল। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও বেসরকারি কিংবা সরকারিভাবে ভোটের ফল ঘোষণা করা হয়নি। এরপরও খুলনায় নিজেদের প্রার্থীর বিজয় ‘সুনিশ্চিত’ ধরে নিয়েই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

নির্বাচন বিষয়ে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনও হয়েছে। সেখানেও আওয়ামী লীগ প্রায় সব কটিতে জয়ী হয়েছে। একটি পৌরসভা ও একটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সাতটিতে আওয়ামী লীগ, তিনটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং দুটিতে বিএনপি জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া বার কাউন্সিল নির্বাচনের ১৪টির মধ্যে ১২টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এইচ টি ইমাম, রাশিদুল আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।