খুলনা সিটি নির্বাচনে পরিবেশ দৃশ্যত শান্ত, তবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে

খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোট। গতকাল প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে।  প্রথম আলো
খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোট। গতকাল প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে। প্রথম আলো

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়নি। বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ছিল শান্ত, তবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে। বিভিন্ন কেন্দ্রে জোর করে বুথে ঢুকে ব্যালটে সিল মারা, জাল ভোটের ঘটনাও ঘটেছে। তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশের বিরুদ্ধে দর্শকের ভূমিকায় থাকার অভিযোগ উঠেছে।

প্রথম আলোর পাঁচজন প্রতিবেদক ও তিনজন আলোকচিত্রী ৮০টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে অন্তত ৬০টি কেন্দ্রেই ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের পাওয়া যায়নি।
বিএনপির অভিযোগ, আগে থেকেই ধরপাকড় ও হুমকি-ধমকিতে তাদের নেতা-কর্মীরা ছিলেন মাঠছাড়া। বেশির ভাগ কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ঢুকতে পারেননি কিংবা বের করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সাংবাদিকদের বলেন, জোর করে সরকারি দল জয় কেড়ে নিয়েছে। এটা ছিল কলঙ্কিত নির্বাচন। নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছে, সে সম্পর্কে আজ বুধবার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়ার কথা জানান তিনি। 

তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা জানা গেছে, সেগুলো কাউন্সিলর প্রার্থীদের। সেটার দায় মেয়র প্রার্থী কেন নেবে।’
ভোট গ্রহণ শুরুর পরপর সকালে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি কেন্দ্রে জোরজবরদস্তি বা দখলের খবর এলেও বেশির ভাগ কেন্দ্রে বেলা ১১টা পর্যন্ত মোটামুটি ভালো ভোট হয়। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল ভালো। কোথাও ধানের শীষের ব্যাজধারী কাউকে দেখা যায়নি। দুপুর ১২টার পর থেকে অনিয়ম ও জাল ভোটের প্রবণতা বাড়তে থাকে। কেবল গণমাধ্যমকর্মী কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ দল আসতে দেখলে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশকে শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় হতে দেখা যায়। প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা যেসব কেন্দ্রে গেছেন, প্রায় সব কটির প্রবেশপথে সরকারি দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মীদের শক্ত অবস্থান দেখা গেছে। রাস্তার মোড় থেকে ছিল তাঁদের পাহারা, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও ছিল তাঁদের সতর্ক দৃষ্টি।

সকাল সাড়ে ৯টায় খুলনা জিলা স্কুল কেন্দ্রে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ৪০টি ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের নির্বাচনী পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকেরা। বিএনপির পোলিং এজেন্ট, সমর্থক ও ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে ঢুকতে না পারেন, এ জন্য ঘেরাও করে রেখে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
সরেজমিন চিত্র
সকাল নয়টায় খুলনা জিলা স্কুল কেন্দ্রের একাডেমিক ভবন-১ ও একাডেমিক ভবন-২-এ গিয়ে দেখা যায়, ১২টি বুথের একটিতেও ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট নেই। অন্য সব প্রার্থীর এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জিলা স্কুল কেন্দ্রের (একাডেমিক ভবন-২) ২ ও ৪ নম্বর বুথে দুজনের জায়গায় নৌকা প্রতীকের পাঁচজন এজেন্ট পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনজন ভুল হয়েছে বলে চলে যান। বিষয়টি অবহিত ছিলেন না বলে জানান ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আতিয়ার রহমান।
সকাল সোয়া নয়টার দিকে একাডেমিক ভবন-১-এর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাজী মো. ইব্রাহীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কেন্দ্রে ধানের শীষের চারজন পোলিং এজেন্টের একজনও পৌঁছাননি।’
খবর পেয়ে জিলা স্কুল কেন্দ্রের একাডেমিক ভবন-২-এ পৌঁছান নজরুল ইসলাম। তিনি ফোনে ওই কেন্দ্রের তাঁর নির্বাচনী এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি বাইরে গিয়ে একাডেমিক ভবন-২ কেন্দ্রের প্রধান পোলিং এজেন্ট সিরাজুল ইসলামকে সঙ্গে করে কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। এ সময় সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, সকালে তিনি কেন্দ্রে ঢুকতে গেলে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকেরা তাঁকে ভয় দেখান এবং চলে যেতে বলেন।
মঞ্জু যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন রেহানা মর্তুজা নামের একজন নারীসহ ছয়-সাতজন যুবক এসে হইচই শুরু করেন। রেহানা মর্তুজা নিজেকে একজন সাধারণ নাগরিক দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, মঞ্জু এই কেন্দ্রে একটা ভোটও পাবেন না। তাই তিনি মিথ্যা কথা বলছেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে মঞ্জু সেখান থেকে চলে যান।

জোর করে সিল, ভোট সাময়িক বন্ধ
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বাড়ির পাশের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ফাতিমা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেও বিএনপির প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে যেতে পারেননি। এই কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জন যুবক জোর করে ঢুকে নৌকা ও ঘুড়ি প্রতীকের ব্যালটে সিল মারতে থাকেন। পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এই বুথে ভোট গ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখেন।
১ নম্বর বুথের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রীতেশ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সাহায্য চেয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তারা ৪৫টি ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েছে।’
খবর শুনে মঞ্জু সেখানে আসেন। টেবিলের ওপর নৌকা প্রতীকে সিল মারা একটি ব্যালট তিনি সাংবাদিকদের দেখান। এ সময় ঘুড়ি প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে সরকারি দলের কর্মীরা কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে জটলা পাকান। সেখানে দাঁড়িয়ে আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছিল। উনি (মঞ্জু) এসে গ্যাঞ্জাম করছেন। নৌকায় সিল মেরে এখন সাংবাদিকদের দেখাচ্ছেন।’

দুপুর ১২টার পর নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্লাটিনাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদের সঙ্গে বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর মধ্যে হাঙ্গামা দেখা যায়। একপর্যায়ে সিবিএর সভাপতি কাওসার আলী মৃধাকে পুলিশ মারধর করে। এ ঘটনায় কিছু সময় ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। বেলা একটার পর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক সেখানে যান। তিনি ওই কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

তালুকদার আবদুল খালেক কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই প্লাটিনাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ অংশের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শেখ আবু মো. মুশফেকুল মোর্শেদের উপস্থিতিতে দুটি বুথে ৮-১০ জন নৌকা-সমর্থিত কর্মীকে জাল ভোট দিতে দেখা যায়। কয়েকজন সাংবাদিক জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখলে ওই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সরিয়ে দেন।
বেলা সোয়া একটার দিকে প্লাটিনাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উত্তর অংশের কেন্দ্র থেকে শিল্পী নামে ধানের শীষের এক নারী পোলিং এজেন্টকে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুমন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, পোলিং এজেন্ট চলে গেছেন।’

দুপুর ১২টার দিকে লবণচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সিল মারছেন কয়েকজন নারী। সাংবাদিকের সামনেই নৌকার প্রতীকের পাশাপাশি ঝুড়ি প্রতীকেও সিল মারতে দেখা যায় তাঁদের। সেখানে থাকা সব ব্যালটেই সিল মারেন তাঁরা। পরে ওই কেন্দ্রটির ভোট গ্রহণও স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
সাড়ে ১২টার দিকে ওই এলাকায় থাকা ইব্রাহীমিয়া এতিমখানা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তাকর্মীদের পাহারা নেই। নৌকার ব্যাজ পরা কয়েকজন পাহারা দিচ্ছেন সেখানে। বেলা দুইটার দিকে আবার ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো ভোটার নেই। বুথের সামনে রয়েছেন কয়েকজন নৌকার প্রতীক লাগানো যুবক।

বিএনপি প্রার্থীর একজন এজেন্ট জানান, ব্যালট পেপার শেষ। কয়েকজন ভোটার অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ভোট দিতে না পেরে চলে গেছেন। তবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. শাহাবুর ইসলাম দাবি করেন, তাঁদের কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। ব্যালট পেপারও আছে।
কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার সময় গেটের সামনে নৌকার ব্যাজ লাগানো কয়েকটি ছেলে হাসতে হাসতে বলেন, এই এলাকার মানুষ খুব সচেতন। এ কারণে তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।

ভোট স্থগিত
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোর করে ব্যালটে সিল মারার কারণে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক জোর করে ঢুকে পড়েন। তাঁরা কেন্দ্রের ৭ নম্বর বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার নিয়ে সিল মেরে ভোট বাক্স ভরতে থাকেন। পরে সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খলিলুর রহমান কেন্দ্রে ভোট স্থগিতের ঘোষণা দেন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খলিল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। পুলিশ এসেছিল। কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা তাঁর জানা নেই।
এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় কেন্দ্রে একদল যুবক ঢুকে ব্যালটে সিল মারতে থাকেন। তাঁরা আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানের নির্বাচনী প্রতীকে সিল মারতে থাকেন। প্রায় আধা ঘণ্টা তাঁরা ব্যালটে সিল মারেন। এরপর পুলিশ এলে তাঁরা চলে যান। পরে দুইটার দিকে কেন্দ্র স্থগিত করা হয়।

ভোট দিল দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে
নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরানি বহুমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে অনেক জাল ভোট পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে জাকারিয়া নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষণ দলের এক সদস্যকে অপদস্থ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রটিতে দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, এস এম মনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি শিশুপুত্রকে নিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হচ্ছেন। বাবা-ছেলের দুজনের হাতের আঙুলে ভোট দেওয়ার সময় লাগানো অমোচনীয় কালি ছিল। কারণ জানতে চাইলে মনোয়ার বলেন, ‘আমার ছেলেও ভোট দিয়েছে।’ ছেলে স্থানীয় কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র বলে জানালেন তিনি।
ছেলেটি জানায়, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছি। টিপু আঙ্কেলকে ভোট দিয়েছি (আওয়ামী লীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আলী আকবর টিপু)।’

ভোটার আছেন, ব্যালট শেষ
দুপুর ১২টা বাজে তখন। ভোটাররা ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে রূপসা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ভোট দিতে পারছেন না। ব্যালট পেপার ফুরিয়ে গেছে জানিয়ে তাঁদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।
এই প্রতিবেদক ওই কেন্দ্রে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাউকে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার নিয়ে আসতে দেখেননি।

ওই কেন্দ্রে নির্বাচন কার্যক্রমে থাকা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল যুবক কেন্দ্রে ঢুকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দেন। এরপর তাঁরা ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ভরে দেন। দুপুর ১২টার দিকে ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে তাঁদের বলা হয়, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে গেছে। ব্যালট পেপার আনতে লোক পাঠানো হয়েছে।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. ইবনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কিছু বহিরাগত জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে। অল্পসংখ্যক ব্যালট পেপারে সিল মেরে তারা বাক্সে ফেলেছে। এ জন্য সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।
এদিকে, ভোট শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট আগে সকাল পৌনে আটটায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সেলিম কাজীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।
খালিশপুর এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ব্যস্ত ছিল সরকারি দলের কর্মীদের সহায়তা করতে। গণমাধ্যমকর্মী ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হলে তাঁরা সতর্ক করে দিচ্ছিল। সাংবাদিক প্রবেশ নিয়েও বাড়াবাড়ি করেছেন পুলিশের সদস্যরা।

অন্য প্রার্থীরা যা বললেন
চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের মেয়র পদপ্রার্থী মোজ্জাম্মিল হক প্রথম আলোকে বলেন, এই নির্বাচন অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জাতীয় পার্টি (জাপা) এস এম শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে ভয়ভীতিসহ নানা রকম সমস্যা ছিল। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মেয়র পদপ্রার্থী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে আক্ষেপ করে বলেন, এই নির্বাচনে তালুকদার খালেক মেয়র হবেন, কিন্তু হারালেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন টিপু সুলতান, সেলিম জাহিদ, মোর্শেদ নোমান, শেখ আল-এহসান ও উত্তম মণ্ডল)