ইউরোপা গ্রুপের মালিক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব

দুদক
দুদক

ইউরোপা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী সেলিম চৌধুরীর মালিকানাধীন বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঋণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাঁকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাশাপাশি ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (ডিএমডি) তিনজনকে বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য দিতে দুদকে তলব করা হয়েছে।

আজ বুধবার ও গতকাল মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত আলাদা আলাদা চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দুদক সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলমের সই করা চিঠিতে সেলিম চৌধুরীকে ২৮ মে সকাল সাড়ে নয়টায় দুদকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী, ডিএমডি আবু জাফর হেদায়তুল ইসলাম এবং ইভিপি অ্যান্ড সিআরএম সৈয়দ মনছুর মোস্তফাকে ২৯ মে দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছ।

এর আগে ইউরোপা গ্রুপ ও ট্রাস্ট ব্যাংকের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। গত ৭ মে ট্রাস্ট ব্যাংকের করপোরেট প্রধান কার্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) নাজমুল ইসলাম শিপন, ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখার এভিপি বিধান চন্দ্র প্রামাণিক, এফএভিপি মো. মাহমুদুল হাসান এবং এসপিও মো. মোবারক হোসাইনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ইউরোপা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ইউরোপা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এমআর গ্লোবাল লিমিটেডের নামে ১০ কোটি টাকা জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্যাংকের ওভারড্রাফট (ওডি) হিসাব থেকে গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ৩৪ কোটি টাকা স্থানান্তরের (মানিলন্ডারিং) অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন এ সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিগগিরই এ ঘটনায় মামলা হতে পারে।

ওই কর্মকর্তা জানান, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ইউরোপা গ্রুপের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধানে আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ওই সব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য খুব শিগগিরই ওই দুই ব্যাংক ও ইউরোপা গ্রুপের কর্মকর্তাদের তলব করা হবে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ইউরোপা গ্রুপ অগ্রণী, রুপালী ও ট্রাস্ট ব্যাংকের তিনটি শাখা থেকে ঋণের নামে শত কোটি টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাত করেছে— এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, অগ্রণী ব্যাংকের পুরানা পল্টন শাখার প্রাক্তন শাখা ব্যবস্থাপকের সহায়তায় ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে হিসাব খুলে, অগ্রণী ও ট্রাস্ট ব্যাংকের তেজগাঁও শিল্প এলাকা শাখা এবং রূপালী ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ঋণের নামে বিপুল অর্থ তুলে নিয়ে আত্মসাৎ।

এরপর থেকে এ সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করতে থাকে দুদকের অনুসন্ধান দল। উপরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের অনুসন্ধান দলের আরেক সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।