পানি আনতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে গৃহবধূর মৃত্যু

তিন বছর আগে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারান সুরুজ মিয়া (৪৫)। সেই থেকে পঙ্গু তিনি। দুই সন্তানসহ চারজনের সংসার সামলানোর মূল দায়িত্ব ছিল সুরুজের স্ত্রী শিরিনা আক্তারের (৪০)। একটু একটু করে ফের দাঁড় করছিলেন পরিবারকে। শিরিনার সেই সংগ্রামী জীবন গতকাল ট্রেনে কাটা পড়ে থেমে গেছে।

গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের ইজ্জতপুর রেলস্টেশনের পাশের এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়েন শিরিনা। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান তিনি। নিহত শিরিনা আক্তার ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মনির হোসেনের মেয়ে।

নিহত গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিজেদের টিউবওয়েল নষ্ট থাকায় গতকাল সকাল পৌনে সাতটার দিকে শিরিনা পানি আনতে রেললাইন পার হচ্ছিলেন। এ সময় অসাবধানতাবশত বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন তিনি। ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছেড়ে ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিল। কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তাঁর। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মেম্বারবাড়ি এলাকায় মারা যান শিরিনা।

সুরুজ মিয়া আগে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানোর পর একসময় ঝুট কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। মঙ্গলবার শিরিনার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মাতম। স্ত্রীকে হারিয়ে পঙ্গু স্বামী অসহায় হয়ে বসে ছিলেন। তাঁর দুই সন্তান হলো শিউলি ও রুবেল।

সুরুজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর আগে গাজীপুর সদরের বাঘেরবাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। ওই সময় তাঁর একটি পা কেটে ফেলতে হয়। এরপর দুই সন্তান নিয়ে শুরু হয় এক সংগ্রামী জীবন। তাঁর স্ত্রী পুরো সংসারের দেখভাল করতেন। দুর্ঘটনার বছর খানেক পর নিজের মনোবল শক্ত করে আবারও কাজে ফেরেন সুরুজ।

জয়দেবপুর জংশন রেলওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস এম রকিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই পরিবার লাশ দাফন করে ফেলে। আমরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।’