মৌলভীবাজারে অপহরণকারীদের কবল থেকে পালিয়ে এল কিশোরটি

শ্রীদামের বাড়িতে জাহাঙ্গীর। বুধবার সন্ধ্যায় তোলা। ছবি: কল্যাণ প্রসূন
শ্রীদামের বাড়িতে জাহাঙ্গীর। বুধবার সন্ধ্যায় তোলা। ছবি: কল্যাণ প্রসূন

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় নিখোঁজের দুই দিন পর স্কুলছাত্র শ্রীদাম বিশ্বাস (১৩) অপহরণকারীদের কবল থেকে পালিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সে উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের আমতৈল চক গ্রামের বাসিন্দা বিপুল বিশ্বাসের ছেলে।

শ্রীদাম বিশ্বাস জুড়ীর জায়ফরনগর ইউনিয়নের প্রহল্লাদপুর গ্রামে মামার বাড়িতে থেকে স্থানীয় জায়ফরনগর উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। গত সোমবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে শ্রীদাম অপহরণের শিকার হয়। পরে গত বুধবার বিকেলে সে বাড়ি ফেরে। অপহরণকারীদের হাত থেকে তাঁকে রক্ষা পেতে অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে।

পরিবার, পুলিশ ও শ্রীদামের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, সোমবার সকালে মামার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে শ্রীদাম নিখোঁজ হয়। তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিন রাতে তার বাবা জুড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মো. জাহাঙ্গীর (৩৫) নামের পার্শ্ববর্তী কুলাউড়া উপজেলার এক কাঠমিস্ত্রি শ্রীদামকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।

বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শ্রীদামদের বাড়িতে গিয়ে লোকজনের ভিড় দেখা যায়। এ সময় ঘটনা সম্পর্কে শ্রীদাম প্রথম আলোকে বলে, সে স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছালে টয়লেটের যাওয়ার প্রয়োজন হয়। এতে পার্শ্ববর্তী মানিক সিংহ বাজারের একটি দোকানে বই রেখে সামনের জুড়ী-কুলাউড়া সড়কের পাশে খোলা জায়গায় যায়। ফেরার পথে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্রাইভেট কার থেকে অজ্ঞাত তিন যুবক মুখ চেপে তাকে গাড়িতে তুলে নেয়। পরে হাত বেঁধে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। এরপর তার আর কিছু মনে নেই। অনেক পরে তার চেতনা ফেরে। তখন বেশ রাত। একপর্যায়ে গাড়িটি একটি রেস্তোরাঁর সামনে থামে। চালকসহ অন্যরা ওই রেস্তোরাঁয় ঢোকে। এ সুযোগে শ্রীদাম জোরাজুরি করে হাতের বাঁধন খুলে ফেলে। গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করে। ভাগ্য ভালো। দরজা খোলা ছিল। এতে সে সহজেই দৌড়ে পালাতে সক্ষম হয়।

শ্রীদাম জানায়, বেশ কিছু পথ যাওয়ার পর সড়কের পাশের দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে সে স্থানটির নাম চট্টগ্রাম জানতে পারে। বাড়িতে যোগাযোগের জন্য ওই দোকানদারের কাছে মুঠোফোন চেয়েছিল। কিন্তু দোকানদার দেননি। পরে বিভিন্ন লোককে জিজ্ঞেস করে রেলস্টেশনের রাস্তা জেনে সেখানে পৌঁছায়। স্টেশনের পাশের এক রেস্তোরাঁর কর্মীর কাছে খাবার চাইলে তিনি দুটি রুটি দেন। মঙ্গলবার রাত স্টেশনে কাটানো শেষে পরদিন বুধবার সকালে সে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠে। কুলাউড়া রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে বাড়ির পথে রওনা দেয়। এ সময় উত্তর কুলাউড়ার কাঠমিস্ত্রি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তার দেখা হয়। জাহাঙ্গীরের মুঠোফোনে স্বজনদের সঙ্গে সে কথা বলে। পরে জাহাঙ্গীর তাকে বাড়ি নিয়ে যান।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ছেলেটার মুখ শুকনা লাগছিল। ভালোমতো কথাও বলতে পারে না। নাশতা করাইলাম। মোবাইলে কথা বলতে চাইলে আমি দিই। পরে সব ঘটনা শুনলাম।’

শ্রীদামের বাবা বিপুল বিশ্বাস ও মামা রসেন্দ্র বিশ্বাস বলেন, শ্রীদাম বাড়ি ফেরায় তাঁরা খুশি। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বিচার চান।

জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে অভিভাবকসহ ছেলেটারে থানায় ডেকে আনি। ঘণ্টা খানেক ছেলেটার সঙ্গে কথা বলেছি। আপনাকে যা বলেছে, আমাকেও তাই। এটা অপহরণকারী চক্রের কাজ হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’