ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা, আদালতে আসামিদের জবানবন্দি

নিহত রুমি বেগম ও তাঁর শাশুড়ি মালা বেগম। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ছবি।
নিহত রুমি বেগম ও তাঁর শাশুড়ি মালা বেগম। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ছবি।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে বউ-শাশুড়িকে হত্যা করে অপরাধীরা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামি বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। তিনি বলেন, গত রোববারের ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক করা হয় জাকারিয়া শুভ ও আবু তালেবকে। বৃহস্পতিবার সকালে হবিগঞ্জ বিচারিক হাকিম সম্পা জাহানের আদালতে তাঁরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত রোববার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আখলাক চৌধুরীর বাড়িতে নারীদের চিৎকার শুনতে পান প্রতিবেশীরা। পরে বাড়ির উঠানে আখলাকের স্ত্রী রুমি বেগমের (২২) রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। ঘরের ভেতরে পাওয়া যায় তাঁর শাশুড়ি মালা বেগমের (৫৫) লাশ। ঘটনার পরদিন নিহত রুমি বেগমের ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মা ও স্ত্রীর হত্যার খবর পেয়ে দেশে আসেন আখলাক চৌধুরীও।

ঘটনার দিন রাতেই নবীগঞ্জ উপজেলার গোবিরবাগ গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে জাকারিয়া শুভ (২০) ও একই উপজেলার আমতৈল গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে আবু তালেবসহ (২৫) পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। পরে শুভ ও তালেবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাদুল্লাপুর গ্রামের একটি ধানখেত থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত ছুরি ও রক্তমাখা কাপড়চোপড় উদ্ধার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা বলেন, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জাকারিয়া শুভ ও আবু তালেব নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন। মূলত আখলাক চৌধুরীর স্ত্রী রুমি বেগমকে ধর্ষণ করতে গিয়েই তাঁকে ও তাঁর শাশুড়িকে হত্যা করেন এই দুজন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা বলেছেন, গত রোববার রাত ১০টার দিকে তাঁরা রুমিদের বাড়িতে যান। আবু তালেব ওই পরিবারের পূর্বপরিচিত ছিলেন। রুমির শাশুড়ি মালা বেগম দরজা খুলে দিলে তাঁরা ভেতরে ঢোকেন। পরে একপর্যায়ে তালেব ও শুভ মালা বেগমের মুখ চেপে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাঁকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ছুরিকাঘাত করা হয়। শাশুড়ির চিৎকার শুনে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে আসেন রুমি বেগম। এ সময় তিনি চিৎকার দিলে শুভ রুমিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। পরে রুমি দৌড়ে পালাতে গিয়ে বাড়ির উঠানে পড়ে যান। এ সময় প্রতিবেশীদের আসতে দেখে পালিয়ে যান শুভ ও তালেব।

সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আ স ম সামছুর রহমান ভূঞা, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আতাউর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।