নাকে অস্ত্রোপচার: হাতুড়ে চিকিৎসকের ভুলে তরুণের মৃত্যু

পল্লি চিকিৎসক ভুলে তরুণের মৃত্যু। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে স্বজনদের আহাজারি। ছবি সংগৃহীত
পল্লি চিকিৎসক ভুলে তরুণের মৃত্যু। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে স্বজনদের আহাজারি। ছবি সংগৃহীত

সাইদুর মাস দু-এক ধরে নাকের সমস্যায় (হয়তো পলিপ) ভুগছিলেন। দিনমজুর বাবার পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই। তাই হাতুড়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন মা নিলুফার খাতুন। অভিযোগ, হাতুড়ে চিকিৎসক ফকরুজ্জামান কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সাইদুরের অস্ত্রোপচার করেন। এতে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই তরুণ।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার আলমপুর গ্রামে ফকরুজ্জামানের তামান্না ফার্মেসিতে মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে। সাইদুর রহমান (১৯) গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের দিনমজুর সানোয়ার হোসেনের ছেলে।

নিলুফার খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, তামান্না ফার্মেসিতে ফকরুজ্জামানের কাছে তাঁর ছেলের জন্য নাকে ব্যথার ওষুধ নিতে গিয়েছিলেন। এ সময় ফকরুজ্জামান সাইদুরকে দেখে একটি আলাদা কক্ষে নিয়ে যান এবং কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া অস্ত্রোপচার শুরু করেন। অস্ত্রোপচারের সময় সাইদুর বেশ কয়েকবার চিৎকার দেন। এরপরেও অস্ত্রোপচার করতে থাকেন ফকরুজ্জামান। একপর্যায়ে তিনি অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে সাইদুর ও তাঁর মা নিলুফারকে নিয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের দিকে ছোটেন। তাঁদের হাসপাতালে রেখে গা ঢাকা দেন ফকরুজ্জামান।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এহসানুল হক বলেন, হাসপাতালে আসার আগেই সাইদুরের মৃত্যু হয়েছে। নাক থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

আলমপুর গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফকরুজ্জামান ওই গ্রামে ফার্মেসি খুলে বেশ কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। কোনো ডাক্তারি সনদ না থাকলেও তিনি বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রোপচার করে থাকেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য, এ ঘটনার আগেও ছয়জন রোগী ফকরুজ্জামানের হাতে অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তবে ফকরুজ্জামান প্রভাবশালী পরিবারের হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

এই মৃত্যুর ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সাইদুরের বাবা-মা ফকরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ফকরুজ্জামানের খোঁজে তাঁর বাড়ি গেলে পরিবারের সদস্যরা বলেন, তিনি সকাল থেকে বাড়ি ফেরেননি। পরিবারের কাছ থেকে মুঠোফোন নম্বর নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেও মুঠোফোনের সংযোগ পাওয়া যায়নি।

জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করতে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকিৎসা সনদ ছাড়া জটিল রোগের অস্ত্রোপচার আইনবহির্ভূত।