নাজিমের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, 'মনজিলের' চালক এখনো পলাতক

নাজিম উদ্দিন
নাজিম উদ্দিন

বেপরোয়া গতির বাসের চাপায় ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী নাজিম উদ্দিনের (৪১) মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ উড়ালসেতুর ওপর শ্রাবণ সুপার ও মনজিল নামের দুটি বাসের রেষারেষির মধ্যে শ্রাবণ বাসের চাপায় তিনি নিহত হন।

এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যার দিকে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছেন নাজিম উদ্দিনের ভায়রা আবদুল আলিম। মামলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার অন্যতম আসামি মনজিল পরিবহনের চালকের নাম এখনো জানা যায়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ। চালককে এখনো তারা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, মনজিলের চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মামলার অন্য দুই আসামি গ্রেপ্তার হাওয়া শ্রাবণ সুপার পরিবহনের চালক ওহিদুল ও মনজিল পরিবহনের চালকের সহকারী কামালকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

চালকের নাম জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘চালকের নাম এখনো জানতে পারিনি। তবে পেয়ে যাব। বাসটি যেহেতু আটক করা হয়েছে, চালকের নামও আমরা পেয়ে যাব।’

নাজিম উদ্দিন সকালে যাত্রাবাড়ী থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন গুলিস্তান। মেয়র হানিফ উড়াল সেতুতে উঠতেই মঞ্জিল ও শ্রাবণ পরিবহনের দুটি বাসের প্রতিযোগিতার মুখে পড়েন তিনি। শ্রাবণ পরিবহনের বাসটি নাজিমের মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি ছিটকে সেতুর সড়কে পড়ে যান। ওই সময় বাসটি তাঁর বুকের ওপর দিয়ে চলে যায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাসেল মাহমুদ ও নাইম ইসলামের ভাষ্য, তাঁদের মোটরসাইকেলটি ওই বাস দুটির পেছনে ছিল। আর নাজিমের মোটরসাইকেলটি ছিল বাস দুটির সামনে। দুটি বাসই বেপরোয়াভাবে চলছিল। এর মধ্যে শ্রাবণ পরিবহনের বাসটি নাজিমের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। নাজিম ছিটকে পড়লে তাঁর বুকের ওপর দিয়েই বাসটি চলে যায়। ঘটনার পর তিনি মোটরসাইকেল থেকে নেমে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নাজিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পথে তাঁর প্রাণ ছিল। কিন্তু হাসপাতালে আনার পর তিনি মারা যান। নাজিমকে চাপা দিয়ে চলে যাওয়া শ্রাবণ পরিবহনের বাসের চালক ওহিদুল আটক হওয়ার পরও স্বাভাবিক ছিলেন।

যাত্রাবাড়ীর শ্যামপুর এলাকায় নাজিমের বাসা। তাঁর গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায়। পাঁচ দিন আগে দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী সাবরিনা ইয়াসমিন ওরফে আইরিন এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন। নাজিম উদ্দিনের প্রাণহীন মুখটি তাঁর স্ত্রীকে দেখানো হয়েছে গতকাল রাতে। এরপরই নাজিম উদ্দিনের লাশ গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়। আজ সকাল ১১টার দিকে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে।
নাজিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই মোসলেহউদ্দিন রিফাত মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই (নাজিম) ছিলেন তাঁর পরিবারের বড় ছেলে। পুরো সংসার তাঁর ওপর নির্ভরশীল। এই অবস্থায় নাজিমকে মেরে ফেলল বাসচালকেরা। ওর ছোট মেয়ে ইসরাত জাহান নুরের বয়স আজ মাত্র পাঁচ দিন। আর বড় মেয়ে নুসরাত জাহানের বয়স নয় বছর। স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।’ নাজিমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।