রানীগঞ্জের রাজা জামরুল

রানীগঞ্জে ঝুড়িতে রাখা জামরুল।  প্রথম আলো
রানীগঞ্জে ঝুড়িতে রাখা জামরুল। প্রথম আলো

সারি সারি ঝুড়িতে রাখা জামরুল। মৌসুমি এই ফলের বাজারজাতকরণে ব্যস্ত মানুষ। এই দৃশ্য গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নে। একে জামরুলের ইউনিয়ন হিসেবেও চেনে মানুষ।

গত সোমবার ইউনিয়নের বরচালা, দেইলগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা যায়, বাগান থেকে সাদা রঙের ফলগুলো বাঁশের ঝুড়িতে ভরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে পাঠানোর জন্য কাজ করছেন নারী-পুরুষেরা। গ্রামবাসী জানান, এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে পরিপক্ব জামরুল কিনে নেন পাইকারেরা। একেকটি গাছ থেকে দুই-তিন মণ জামরুল পাওয়া যায়। এই এলাকায় বহুকাল ধরে জামরুল, হরীতকী, নাশপাতি, লিচু, লটকনসহ বিভিন্ন ফলের চাষ হয়। এ বছর জামরুলের বাম্পার ফলন হয়েছে।

জামরুলচাষি কবির হোসেন জানান, প্রতিবছর মাঘ থেকে চৈত্র মাসে জামরুলগাছে ফুল আসতে থাকে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পাকা ফলগুলো সংগ্রহ করা হয়। এগুলোর বিভিন্ন জাত আছে। তবে রানীগঞ্জে সাদা ও লাল জামরুলের চাষ হয়। তিনি আরও জানান, এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই জামরুল, লিচু, লটকনসহ বিভিন্ন ফলের চাষ হয়। তবে জামরুল চাষে গত পাঁচ বছরে অনেক কৃষকের ভাগ্য খুলেছে। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রানীগঞ্জের রাজা জামরুল। এর চাষপদ্ধতি সহজ হওয়ায় লাভের সম্ভাবনাই বেশি।

দেইলগাঁও গ্রামের পাইকারি ফল ক্রেতা মাসুম মিয়া জানান, প্রতিবছর রানীগঞ্জ থেকে ২০০ মণ পর্যন্ত জামরুল কেনেন তিনি। এবার পাইকারিতে প্রতি মণ ফল ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় কেনা হচ্ছে। তিনি জানান, ফলগুলো খুব যত্ন করে সরবরাহ করতে হয়। কারণ, এগুলোর গায়ে একটু আঁচড় লাগলেই কেউ আর কিনতে চায় না।

গাজীপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মদন গোপাল সাহা জানান, ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য জামরুল খুবই উপকারী। এই ফলে তরমুজ ও আনারসের সমান এবং আম ও কমলার চেয়ে তিনগুণ খনিজ আছে। ক্যালসিয়াম আছে আঙুরের চেয়ে বেশি। ক্যালসিয়াম থাকে লিচুর সমান। এখানেই শেষ নয়, জামরুলে আছে পেঁপে ও কাঁঠালের চেয়ে বেশি আয়রন এবং আম, কমলা ও আঙুরের চেয়ে বেশি ফসফরাস।

কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার কর বলেন, ‘আমরা জামরুলচাষিদের সব রকমের সহযোগিতা দিয়ে থাকি।’