'চালু' জবাইখানা তালাবদ্ধ

অব্যবহারে ধুলামলিন মহাখালীর নতুন পশু জবাইখানা। ছবিটি গতকাল তোলা।  প্রথম আলো
অব্যবহারে ধুলামলিন মহাখালীর নতুন পশু জবাইখানা। ছবিটি গতকাল তোলা। প্রথম আলো

জবাইখানার দোতলা ভবনটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। ফটকের সামনের অংশ ঝরা পাতা, আগাছা আর শেওলায় ভরা। ভবনের ভেতরে একটা বিড়াল ঘুরঘুর করছে। লাল রঙের পানির পাইপগুলো গোটানো। মেঝেতে জমে আছে কয়েক স্তরের ধুলা। জবাইখানাসংলগ্ন আনসার ক্যাম্পে অবস্থানরত সদস্যরা বলছেন, গত এক-দেড় মাসের মধ্যে তাঁরা এখানে কাউকে কাজ করতে দেখেননি।

অথচ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সম্পত্তি বিভাগ বলছে, এক মাস আগেই মহাখালীর নতুন এই জবাইখানাটি চালু হয়েছে। আবার করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ভাষ্য, জবাইখানাটি পরিচালনার জন্য এ পর্যন্ত দুইবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় ঠিকাদার নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি।

মহাখালীতে ডিএনসিসির নতুন এই জবাইখানাটির অবস্থান সংস্থাটির অঞ্চল-৩-এর কার্যালয়ের সীমানার ভেতরে। ইসলামিক রিলিফ ইউএসএর অর্থায়নে ও ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের সহায়তায় তিন হাজার বর্গফুটের এই স্থাপনাটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। কিন্তু শুরুতে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় ও পরে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতায় উদ্বোধনের প্রক্রিয়া ছয় মাস আটকে ছিল। শেষে ওই বছরের ২১ নভেম্বর ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম এর উদ্বোধন করেন। আধুনিক এ জবাইখানায় পশু রাখার জায়গা, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য ও রক্ত সংগ্রহের সুবিধা আছে। এ ছাড়া আছে চামড়া, শিং, হাড় সংগ্রহ এবং মাংস কাটার সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার জন্য পানি গরম করার ব্যবস্থা।

জানতে চাইলে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস আগেই জবাইখানাটি চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবলও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে পশু জবাইয়ের জন্য মাংস ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হচ্ছেন না।

স্বাস্থ্যসম্মত জবাইখানা ব্যবহারে মাংস ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রচার-প্রচারণাসহ ডিএনসিসির পক্ষ থেকে নেওয়া অন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো প্রচার চালানো হয়নি। তবে মাংস ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটা সভা আয়োজনের পরিকল্পনা আমাদের আছে।’

বিকেলে জবাইখানায় গিয়ে সেটি চালুর কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। পরে যোগাযোগ করা হয় ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুইবার টেন্ডার কল করেও আমরা কাঙ্ক্ষিত দর পাইনি। তাই শেষ পর্যন্ত এটা ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তা এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়াধীন।’

এ সময় প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার বক্তব্য সম্পর্কে জাকির হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি সেটাই আপনাকে বললাম। জবাইখানা চালু থাকার কথা উনি (প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম) কী ভেবে বলেছেন তা বলতে পারব না।’

রাজধানীতে এখন ডিএনসিসির দুটি জবাইখানা চালু আছে। একটি মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ভেতরে, অন্যটি মিরপুর-১১ নম্বরের নিউ সোসাইটি মার্কেটে। এই দুটি জবাইখানায় প্রতিদিন ৪০০ পশু জবাই করার ব্যবস্থা আছে। সিটি করপোরেশন প্রতি গরু জবাই করতে ৫০ টাকা, মহিষের জন্য ৭৫ টাকা, ছাগল বা ভেড়ার জন্য ১০ টাকা করে নিয়ে থাকে। মহাখালীর নতুন জবাইখানায় দিনে ৩০০ পশু জবাইয়ের সুযোগ আছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ডিএনসিসির আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে দৈনিক দুই হাজারের বেশি পশু জবাই হয়।