দুই মেয়েকে নিয়ে কোথায় গেলেন বাবা?

আলফি ও শিফাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছেন বলে এলাকাবাসীর কাছে মোবাইলে জানিয়েছেন বাবা। ছবি: প্রথম আলো
আলফি ও শিফাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছেন বলে এলাকাবাসীর কাছে মোবাইলে জানিয়েছেন বাবা। ছবি: প্রথম আলো

আলফি (৭) ও শাফি (৫) দুই বোন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাবা সেলিম মিয়া তাদের মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরের দিন সকাল থেকে সেলিম ‘অজ্ঞাত’ স্থান থেকে আত্মীয়স্বজনের কাছে মোবাইলে জানান, তিনি তাঁর দুই মেয়েকে হত্যা করেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর শহরের দয়ারপাড় গ্রামে। সেলিম ওয়েল্ডিং ব্যবসায়ী। নির্যাতন করায় নেশাগ্রস্ত স্বামী সেলিমের সঙ্গে গত জানুয়ারিতে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান লাকী আকতার। এখন দুই মেয়ের এমন খবরে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

আজ শনিবার বিকেলে সেলিমের গ্রামের বাড়ি দয়ারপাড়ে গিয়ে তাঁর ঘরটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। সেলিমের মা রোকেয়া বেগম বলেন, সেলিমকে নিয়ে তাঁদের পুরো পরিবারে অশান্তি। পারিবারিক কলহের কারণে এক বছর আগে সেলিমের স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যান। কিন্তু দুই মেয়ে আলফি ও শাফি বাবার সঙ্গে থাকত। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর সেলিম দুই মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর ফিরে আসেননি। এলাকাবাসী তাঁকে জানিয়েছেন, সেলিম দুই মেয়েকে হত্যা করে লাশ পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়ায় পুঁতে রেখেছেন বলে মোবাইলে গ্রামবাসীকে জানাচ্ছেন।

সেলিমের বড় ভাই বাবু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ভগ্নিপতি হবিবর রহমান শনিবার সকালে সেলিমকে খুঁজতে যান। দুপুরের দিকে সেলিমকে নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীর সামনে পেয়ে আটকে রাখেন। এ সময় বাবু মিয়া হবিবরের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। বাবু মিয়াকে হবিবর বলেন, সেলিম তাঁর দুই মেয়েকে হত্যা করে পার্বতীপুর উপজেলার শালপাড়ায় পুঁতে রেখেছেন। এলাকাবাসী বলছেন, সেলিম নেশাগ্রস্ত।

বিষয়টি ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম এবং নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকারকে জানানো হয়। তৎক্ষণাৎ পুলিশের একটি দল স্বপ্নপুরীর সামনে যায়। তবে হবিবর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মুঠোফোন বন্ধ করে সেলিমকে নিয়ে সটকে পড়েন।

এ সময় আফতাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এক সদস্য সেলিমের মোবাইলে যোগাযাগ করলে সেলিম পুলিশের ওই সদস্যকে জানান যে তাঁর দুই মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে এসেছেন। এরপর থেকে সেলিম ও হবিবরের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

বিষয়টি জানার পর দেবীপুর গ্রামে সেলিমের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দুই মেয়েকে পাওয়া যায়নি। সেলিমের স্ত্রী লাকী আখতার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী নেশাগ্রস্ত। গত বছর কলেজের দুই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে জেলেও যান। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক বছর আগে স্বামীর বাড়ি থেকে চলে আসেন। বাবার বাড়িতে এসেও তাঁকে নির্যাতন করতেন সেলিম। একবার বাড়িতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যান। বাধ্য হয়ে গত জানুয়ারিতে সেলিমকে তালাক দেন। লাকী বলেন, সকালে গ্রামবাসীর মাধ্যমে জানতে পারেন, সেলিম তাঁর দুই মেয়েকে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় শনিবার রাত আটটায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

ফুলবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর পুলিশের একটি দল শিশু দুই বোনের সন্ধান এবং সেলিমকে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা করছে।