পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব, কমিটি নেই

>

ঢাকা মহানগরে (উত্তর ও দক্ষিণ) বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ৪৯টি থানা ও ৯৩টি ওয়ার্ড ইউনিট আছে। কারা সেখানে নেতৃত্বে, সাংগঠনিক অবস্থা কেমন এ নিয়ে প্রথম আলোর বিশেষ আয়োজন মহানগরের রাজনীতি।

আবু আহমদ মন্নাফী ,আশিকুর রহমান  ও আবুল হোসেন
আবু আহমদ মন্নাফী ,আশিকুর রহমান ও আবুল হোসেন

ওয়ারী থানা এবং এর অধীনে থাকা তিনটি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। এ জন্য উপকমিটি গঠন করেছিল আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি। কিন্তু পছন্দের ব্যক্তিদের পদ দেওয়া নিয়ে এখন এই উপকমিটির সদস্যদের সঙ্গে মহানগর দক্ষিণ কমিটির দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।

উপকমিটির সদস্যদের অভিযোগ, কমিটিগুলোর পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে এই উপকমিটি গঠন করেছিল মহানগর দক্ষিণ। কিন্তু পরে তাদের তালিকা করতে দেওয়া হয়নি। নিজেদের পছন্দমতো লোকদের নিয়ে প্রস্তাবিত কমিটি করেছেন ওয়ারী থানা ও এর অধীনে থাকা তিনটি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা। এতে কাঙ্ক্ষিত পদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক যোগ্য নেতা-কর্মী।

তবে এই তালিকাগুলো থেকে দলের তৃণমূলের যোগ্য নেতা-কর্মীরা বাদ পড়েনি বলে দাবি করেছেন ওয়ারী থানা এবং তিনটি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা। কয়েকজন বলছেন, মহানগর দক্ষিণের কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহে আলমের (মুরাদ) নির্দেশেই উপকমিটিকে পাশ কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় ওয়ারীতে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারছে না আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসনে দলের সমর্থন চাচ্ছেন ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন। তাঁরা দুজনই এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের এপ্রিলে আশিকুর রহমান চৌধুরীকে সভাপতি ও আবুল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ওয়ারী থানার আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। একই সময়ে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে খন্দকার মাইনুর রহমানকে সভাপতি ও মোশারফ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে রোকন উদ্দিন আহমেদকে সভাপতি ও মাকসুদ আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম রহমানকে সভাপতি ও সারোয়ার হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। পরে গত বছরের মার্চে ওয়ারী থানা এবং এই তিন ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি উপকমিটি গঠন করে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু আহমেদ মন্নাফী। কিন্তু কিছুদিন পরই এ কমিটিকে বাদ দিয়ে ওয়ারী থানা ও ওই তিন ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রস্তাবিত তালিকা করার নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম। পরে সংশ্লিষ্ট সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা গত জুলাইয়ে এ তালিকা মহানগরে জমা দেন। ওয়ারী থানা কমিটি ৭১ এবং ওয়ার্ড কমিটিগুলো ৬৯ সদস্যের প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, উপকমিটিকে কেন্দ্র করে আবু আহমদ মন্নাফী ও শাহে আলমের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গত অক্টোবরে মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক উদ্বোধনের সময় মন্নাফীকেও শাহে আলমের লোকজন লাঞ্ছিত করেন। পরে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে আজিমপুরে পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শুরুর আগে বাইরে মন্নাফীর লোকজন ময়লা হামলা চালান। তখন এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে।

মন্নাফীর অনুসারীদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত কমিটিতে বরিশালের লোকজনই বেশি রাখছেন শাহে আলম। অথচ নির্বাচনের সময় তাঁরা নিজ এলাকায় চলে যাবেন। মন্নাফী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপকমিটি গঠনের পর ওয়ারী থানা ও ওই তিনটি ওয়ার্ডের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে চারটি বৈঠক করেছি। কিন্তু হঠাৎ আমাদের পাশ কাটিয়ে প্রস্তাবিত তালিকা তৈরি করতে থানা কমিটিকে নির্দেশ দেয় মহানগর কমিটি। এটি সংগঠনের শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ।’ তিনি বলেন, এই প্রস্তাবিত তালিকায় কাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় কী, তা পরিষ্কার নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহে আলম কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে ওয়ারী থানার সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত কমিটিগুলোর তালিকা তৈরির আগে প্রত্যেক কর্মীর রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও বিতর্ক আছে, তাঁদের প্রস্তাবিত তালিকায় রাখা হয়নি।