রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী বাদে কাউকে সড়কে বিশেষ সুবিধা না দেওয়ার প্রস্তাব

ঢাকায় যানজটে বছরে ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা। ফাইল ছবি
ঢাকায় যানজটে বছরে ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা। ফাইল ছবি
>
  • রাজধানীতে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট
  • ৬০ শতাংশ যানজট কমলে ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে 
  • ৭৪ শতাংশ দুর্ঘটার শিকার পথচারীরা

যানজটের কারণে ব্যস্ত সময়ে রাজধানীতে গণপরিবহনের গতি এখন ঘণ্টায় গড়ে ৫ কিলোমিটারে (কিমি) এসে ঠেকেছে। অন্যদিকে একজন মানুষের হাঁটার গতিও গড়ে ৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) করা গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাদে অন্য কাউকে সড়কে বিশেষ সুবিধা না দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন এআরআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন।

যানজট ও সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে করা গবেষণায় এই অধ্যাপক দেখিয়েছেন, রাস্তায় কাউকে একবার বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলে এর প্রভাব পরিবহনব্যবস্থায় প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার সকালে এআরআই ভবনে এআরআই এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এর শিরোনাম ছিল ‘গণপরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং যানজট নিরসনের পরিকল্পনা রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তি ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকার’।

‘মিটিগেটিং ট্রাফিক কনজেশন ইন ঢাকা: অ্যাপ্রোপ্রিয়েট পলিটিক্যাল অ্যাজেন্ডা’ (ঢাকার যানজট কমানো: কার্যকর রাজনৈতিক কর্মসূচি) শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

গবেষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রাজধানীর যানজট যদি ৬০ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো যাবে। তিনি বলেন, যানবাহনচালকদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই। একটানা তিন দিন যানবাহন চালালেও বিশ্রামের ব্যবস্থা নেই। ফলে চালকদের মেজাজ রুক্ষ্ম থাকে। অব্যবস্থাপনা তাদের ঘাতকে পরিণত করছে। তিনি বলেন, শহরের মোট দুর্ঘটনার ৭৪ শতাংশের শিকার পথচারীরা।

গোলটেবিলে বৈঠকে সরকারের পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির পরিচালক (টেকনিক্যাল) মাহবুবুর রহমান বলেন, ৪০ হাজার চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটা প্রকল্প নিয়েছেন তাঁরা।

রাজনীতি ঠিক না হলে কোনো কিছু ঠিক হবে না বলে গোলটেবিলে মন্তব্য করেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দায় নিচ্ছেন না।

রাজনৈতিক নেতাদের ভাবনা
নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তি ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকার নিয়ে এই গোলটেবিলের আয়োজন করা হলেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বাসের চাপায় মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকারে নেতারা বলছে, আমরা কি বাস চালাই? হাত-পা বাইরে কেন? পথচারীরা তো আইন মানছে না? আমরা সমুদ্র ও মহাকাশ জয় করেছি, এটা অর্জন। কিন্তু ফুটপাত ও সড়ক জয় করতে পারছি না।’

প্রধান দুটি দলের নেতাদের কেউ না থাকার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আজকে যারা বড় আছে, কালকে তারা নাও থাকতে পারে।’

গণপরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলার উদাহরণ দিয়ে গণফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, আদালতের রায়ে চালকের শাস্তি হওয়ার পর এক মন্ত্রী তাঁর বাসভবন থেকে আইন অমান্য করার সিদ্ধান্ত নেন। আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জোনায়েত সাকী ও বিকল্পধারার নেতা ওমর ফারুক।

অন্য শহরের সঙ্গে ঢাকার তুলনা
বুয়েটের এআরআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর গবেষণায় দেখান, ভারতের মুম্বাই শহরে একটি সংস্থার অধীনে ৩ হাজার ৬০০ বাস দিনে ৪৮ লাখ যাতায়াত (ট্রিপ) হয়। যানজটও তুলনামূলক কম। সব দায়-দায়িত্ব সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীর। আর ঢাকায় ৬ হাজার বাসে ৩০ লাখ যাতায়াত হয়। শত শত মালিক। নিয়ন্ত্রকও অনেক।

এ অবস্থার উন্নয়নে একটি মাত্র নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান থাকার পক্ষে মত দেন অধ্যাপক মোয়াজ্জেম। এ ছাড়া পরিবহন খাতে ভর্তুকির পরামর্শ দেন তিনি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন জাসদ (একাংশ) নেতা নাদের চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের আসাদুল্লাহ তারেক, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের মারুফ হোসেন, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারবিডার সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ। সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান।