খালাসের সাড়ে ৫ বছর পর খুলল আজহারের মুক্তির পথ

হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে খালাস পাওয়ার পর সাড়ে সাত বছর কেটে গেছে দিনাজপুরের উত্তর জয়দেবপুর গ্রামের জয়দেবপুর গ্রামের আজহার ওরফে রাজার। আর আপিল আদালতের সিদ্ধান্তের পরেও কেটেছে সাড়ে পাঁচ বছর। মেলেনি মুক্তি। আজহারের মামলার বর্তমান অবস্থান নিশ্চিতে কয়েক দফা চিঠি চালাচালিও হয়।

আপিল বিভাগের ইতিপূর্বে দেওয়া আদেশসংক্রান্ত রায়ের কপি রোববার দিনাজপুর কারা কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে আজহারের মুক্তির পথ খুলতে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদেশ পাঠানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে হওয়া একটি হত্যা মামলায় ২০০৫ সালে বিচারিক আদালতের রায়ে আজহারের মৃত্যুদণ্ড হয়। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর করা জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষে ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে খালাস পান আজহার। এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন (ফৌজদারি বিবিধ আবেদন) করে রাষ্ট্রপক্ষ, যার ওপর শুনানি নিয়ে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়, দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল করবে, নতুবা ফৌজদারি বিবিধ আবেদনটি খারিজ হয়ে যাবে। পরে কারা কর্তৃপক্ষ লিভ টু আপিলের ফলাফল ও বর্তমান অবস্থা নিশ্চিত করতে কয়েক দফা চিঠি দেয়।

চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের এক চিঠির ভাষ্য, ২০১০ সালের এক স্মারকে ওই বন্দীর মুক্তির আদেশনামা দিনাজপুর অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে পাওয়া যায়। তবে ভুল মুক্তি এড়ানোর জন্য যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার ২০১০ সালের ৩০ মার্চ তারিখে স্বাক্ষরিত লিভ টু আপিল-সংক্রান্ত একটি আদেশনামা ফ্যাক্সযোগে এই দপ্তরে পাঠান। দিনাজপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজের সঙ্গে লিভ টু আপিলের তারিখের গরমিল থাকায় বন্দীর মুক্তিতে সংশয় দেখা দিলে পৃথক তিনটি স্মারকে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবরে চিঠি পাঠিয়ে বন্দীর মুক্তি বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রার্থনা করা হয়। পরে ২০১১ সালে অতিরিক্ত দায়রা জজের এক স্মারকে বন্দীর লিভ টু আপিলের ফলাফল হাইকোর্ট থেকে পাওয়া যায়নি মর্মে এই দপ্তরকে অবহিত করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে লিভ টু আপিলের বিষয়ে ফলাফল জানতে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবরে চিঠি পাঠানো হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বন্দী (আজহার) মৌখিকভাবে জানিয়েছেন তিনি ওই মামলায় খালাস পেয়েছেন। বন্দীকে অবস্থানের জন্য ২০১২ সালের ১০ জুলাই কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় এবং পরে ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর দিনাজপুর কারাগারে বদলি হয়ে ফিরে যান।

এরপর ১২ মে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির উদ্যোগে ‘উচ্চ আদালতে সরকারি আইনি সেবা: বিচারপ্রার্থীগণের প্রত্যাশা ও জেল আপিল মামলা পরিচালনায় আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সেদিন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের কাছে ওই বন্দীর লিভ টু আপিলের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করতে অনুরোধ জানান দিনাজপুরের জেল সুপার। পরে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যসচিবের স্বাক্ষরে ১৫ মে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবরে লিভ টু আপিলের ফলাফল ও মামলার বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে চিঠি পাঠানো হয়। এরপর রোববার আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের ভুইয়ার স্বাক্ষরে ওই আদেশ পাঠানো হয়।