দেখে মনে হবে 'আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ' ব্র্যান্ডিংটা যথার্থই

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮-১০ বছর ধরে আমবাগানের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শিবগঞ্জের দেবীনগর গ্রামের পাশে ১০ বছরের পুরোনো আমবাগানগুলো দেখতে যাই সম্প্রতি। মাইলের পর মাইলজুড়ে শুধু বাগান আর বাগান। বাগানের গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝোলা আম। সবুজ আর সবুজ। কিছু আমে হলুদাভ ও সিঁদুরে রং লাগতে শুরু করেছে। আমগুলো যেন জানান দিচ্ছে আমাদের বাজারে নামতে আর কটা দিন মাত্র বাকি।

উদ্যমী আমচাষি শামীম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৮-১০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এসব নতুন আমবাগান করা হয়েছে ৮-১০ বছরের মধ্যে। এই বাগানের মধ্যে আমার পাঁচ বিঘা বাগান রয়েছে। আমের সময় তো এই বাগান অপরূপা।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানের মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে শিবগঞ্জে। ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টরের মধ্যে ১৭ হাজার হেক্টর আমবাগানই হচ্ছে শিবগঞ্জে। নিরাপদ আম উৎপাদনে আমচাষিরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের জন্য তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য আমে চীন থেকে আমদানি করা বিশেষ ধরনের কাগজের ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করছেন। এতে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকের ব্যবহার কমেছে। পরিবেশও রক্ষা হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দেবীনগরের আমবাগানে।  ছবি: প্রথম আলো
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দেবীনগরের আমবাগানে। ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন গাছে গাছে আম থাকলেও পাকা স্বাদ নিতে আমপ্রেমীদের অপেক্ষা করতে হবে ২৫ মে পর্যন্ত। ভোক্তাদের কাছে যেন অপরিপক্ব আম সরবরাহ করা না হয়, সে জন্য জেলা প্রশাসন বিভিন্ন সুস্বাদু ও প্রচলিত জাতগুলো বাজারজাত করার সময় বেঁধে দিয়েছে। এ সময় বাঁধা হয়েছে আমবিজ্ঞানী ও কৃষিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে।

কৃষিবিদ ও আমবিজ্ঞানীদের মতে, এবার আমের ফলন হবে আশাব্যঞ্জক। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আমের অনুকূলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হোদার মতে, ৩৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির প্রায় ২৬ লাখ গাছে এবার আম ফলবে আড়াই লাখ মেট্রিক টন। নিরাপদ আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমচাষিদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকের ব্যবহার হচ্ছে বিধিমোতাবেক। এবার আমে প্রায় নয় কোটি ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আম আসছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনীতিকে চাঙা করতে। আর কয়েক দিন পরই শুরু হবে আমকে কেন্দ্র করে লাখো মানুষের বিরাট কর্মযজ্ঞ। তিন মাসের আমের ব্যবসায় কয়েক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হবে বলে আমচাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষিবিদদের অভিমত।