দৌলতদিয়ায় দেড় কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সড়ক। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা, রাজবাড়ী, ২০ মে। ছবি: এম রাশেদুল হক।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সড়ক। দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা, রাজবাড়ী, ২০ মে। ছবি: এম রাশেদুল হক।


পাকা সড়কের কার্পেটিং খোয়া গেছে। ইট-সুরকি উঠে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে জলাবদ্ধতা হয়। মাঝেমধ্যে সেখানে যানবাহনের চাকা আটকে এক্সেলসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ বিকল হচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ এমন বেহাল দশায় রয়েছে। এই পথে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জন্য এই দেড় কিলোমিটার এখন মাথাব্যথা। এবার ঈদুল ফিতরের আগে এটা মেরামত না হলে ঘরে ফেরা যাত্রীদের জন্য তা বাড়তি দুর্ভোগের কারণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রশাসন জানিয়েছে, গতকাল রোববার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঘাট-সংক্রান্ত সভায় গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির মেরামতকাজের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে কাজ শুরু হলে সমস্যার সমাধান হবে।

জানা যায়, মহাসড়কের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট টার্মিনালের শুরু থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত চার লেন রয়েছে। চারলেন সড়কের শুরু থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় অংশেই গর্ত তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বেশ কয়েকটি বড় বড় গর্ত। যেখানে বৃষ্টির পানি জমে হাঁটু পর্যন্ত দেবে যায়। মাঝেমধ্যে যানবাহনের চাকা আটকে বিকল হয়ে পড়ে। ঘাটের দিকে কিছু দূর এগোলে ক্যানেল ঘাট এলাকায় ছোটখাটো গর্ত থাকলেও চারলেন সড়ক শেষে টার্মিনাল এলাকার কুষ্টিয়া বাস কাউন্টারের সামনে বেশ কয়েকটি বিশাল আকারের গর্ত তৈরি হয়েছে। টার্মিনাল থেকে নিচু হওয়ায় সড়কে দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা বা মাহেন্দ্রের মতো ইঞ্জিনচালিত ছোট যানকেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। কখনো কখনো যাত্রীবাহী রিকশা, অটোরিকশা উল্টে যায়। পানি ছিটে আশপাশের দোকানের মালামাল নষ্ট হওয়াসহ পথচারীদের পোশাক নষ্ট হয়ে যায়।

কুষ্টিয়া বাস কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আফজাল ব্যাপারীসহ কয়েকজন জানান, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রী নদী পাড়ি দিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে বাসের জন্য কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে টিকিট কাটা বা বাসে উঠতে পারেন না। কাদাযুক্ত গর্তে গাড়ি দাঁড়াতে পারে না। তাই যাত্রীদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।

খাবার বিক্রেতা প্রদীপ কুমার দাস বলেন, লঞ্চ বা ট্রলার ঘাটে পৌঁছানোর জন্য এই সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সড়ক দিয়ে লঞ্চ বা ফেরিঘাটে চলাচল করে। সড়কজুড়ে বেশ কয়েকটি বড় গর্তের কারণে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। কোনো দ্রুতগামী গাড়ি গেলে কাদাপানি ছিটে আশপাশের দোকানের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়।

ঢাকাগামী দূরপাল্লার একটি পরিবহনচালক বিল্লাল জোয়াদ্দার বলেন, ফেরিঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানকার সড়কগুলো থাকার কথা সবচেয়ে ভালো এবং সুন্দর। কিন্তু ঘাটের নানা ভোগান্তির সঙ্গে বাড়তি ভোগান্তি যোগ হয়েছে মাত্র দেড়-দুই কিলোমিটার সড়কের খানাখন্দ। ঘাটের কাছে এসে বড় বড় গর্তে চাকা পড়ে গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে যায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, ফেরিঘাট সড়কের টার্মিনাল এলাকায় অনেক দিন ধরে নানা সমস্যা চলছে। খানাখন্দে কিছু ইট-সুরকি ফেলে সংস্কার করলেও কয়েক দিন পর আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এই খানাখন্দের কারণে এখানে এসে গাড়ির গতি কমে যায়। এমনকি অনেক সময় যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে সড়কে যানবাহন আটকে পড়লে যানজট সৃষ্টি হয়। তিনি জানান, গতকাল জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঘাটসংক্রান্ত সভায় গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী সড়ক ও জনপদের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় দুই মাস আগে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চার লেন সড়কের ফেরিঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়ক সংস্কার বা মেরামতের জন্য দরপত্র প্রদান করা হয়েছিল। ফরিদপুরের মেসার্স ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন নামক প্রতিষ্ঠানের এতে কাজ করার কথা। ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামতকাজ আসন্ন ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগে শুরুর কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যথাসময়ে কাজ শুরু হলে সমস্যা আর থাকবে না বলে আশা করা যায়।