শ্রীমঙ্গলে আনারসের বাম্পার ফলন, গতবারের চেয়ে দাম কম

উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে আসা আনারস গাড়ি থেকে নামানো হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল নতুন বাজার, মৌলভীবাজার, ১৯ মে। ছবি: শিমুল তরফদার
উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে আসা আনারস গাড়ি থেকে নামানো হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল নতুন বাজার, মৌলভীবাজার, ১৯ মে। ছবি: শিমুল তরফদার


চায়ের জন্য খ্যাত শ্রীমঙ্গল। এই চায়ের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের আনারসের খ্যাতি রয়েছে সারা দেশে। এবার শ্রীমঙ্গলের প্রায় ৩০৪ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলনের কারণে গত বছরের তুলনায় এবার শ্রীমঙ্গলে আনারসের দাম কিছুটা কম।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় ষাটের দশক থেকে আনারস চাষ শুরু হয়। এখানকার উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু আনারস চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সারা বছরই কমবেশি আনারস পৌঁছে যায়। এবার উপজেলার বিভিন্ন বাগানে চাষ করা আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাম্পার ফলনের কারণে গতবারের তুলনায় এবার আনারসের দাম কিছুটা কম।

প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের পুরান বাজার, নতুন বাজার এলাকার আড়ত ছাড়াও খোলা বাজারে বিপুল পরিমাণ আনারস কেনাবেচা হয়ে থাকে। শ্রীমঙ্গলে উৎপাদিত আনারস প্রতিদিন, ট্রাক, পিকআপ আর ভ্যান ভর্তি করে বিভিন্ন জেলায় ক্রেতারা নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোহাজেরাবাদ, বিষামণি, হোসেনাবাদ, বালিশিরা, ডলুছড়া, সাতগাঁও, নন্দরানী, মাইজদীসহ উপজেলার পাহাড়ি এলাকার প্রায় ৩০৪ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় সেখানে সব মিলিয়ে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।

উপজেলার সাতগাঁও এলাকার আনারসবাগানের মালিক সঞ্জিত দেব বলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি আনারস উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। সার ও চারার দাম বৃদ্ধি, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে আনারসের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপরও যা দাম পাচ্ছেন, তাতে লাভই হয়েছে।

শ্রীমঙ্গলের নেপাল আদিত্য অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী নেপাল আদিত্য দাশ জানান, এ বছর উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাজারে আনারস আসছে। চাষিদের কাছ থেকে কিনে তা তিনি বড় বড় পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন। গতবারের চেয়ে এবার দাম কিছুটা কম। প্রতিটি আনারস সর্বনিম্ন সাত টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত বছর আনারসের দাম ছিল আকারভেদে ৯ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত।

উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে আসা আনারস আড়তে রাখা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল নতুন বাজার, মৌলভীবাজার, ১৯ মে। ছবি: শিমুল তরফদার
উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে আসা আনারস আড়তে রাখা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল নতুন বাজার, মৌলভীবাজার, ১৯ মে। ছবি: শিমুল তরফদার

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা বলেন, শ্রীমঙ্গলে এবার প্রায় ৩০৪ হেক্টর জমিতে হানি কুইন ও জায়ান্ট কিউ দুই ধরনের আনারসের চাষ বেশি হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি জানান, আনারসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ কৃষি কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়েছে।

তবে আনারসের বাম্পার ফলন হলেও নানান বিষয়ে হতাশার দিকও রয়েছে। বেশ কয়েকজন বাগানমালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্য প্রাণীর উৎপাতে আনারস চাষ থেকে অনেকেই মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।

বাগানমালিক শ্যামল দেব বর্মা জানান, বেশির ভাগ পাহাড়ি এলাকায় আনারসের চাষ করতে হয়। পাহাড়ে আনারস পরিপক্ব হওয়ার আগেই বানরসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী এসে দলে দলে ফলগুলো নষ্ট করে দেয়। পাকা আনারস নিয়ে খেয়ে ফেলে। বন্য প্রাণী হওয়ার কারণে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দায়বদ্ধতা থেকে তাদের মারতে পারেন না তাঁরা। ফলে অনেক মালিক আনারস ছেড়ে লেবু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ, লেবু টক হওয়ায় বন্য প্রাণীরা তা নষ্ট করে না।

বাগানমালিক সরফরার আলী বাবুল বলেন, সুস্বাদু ফল আনারস প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা এখানে নেই। প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করলে এ ফল থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হতো। এ ছাড়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।