লাকপা রির চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন মুহিত, শায়লা ও মজনু

লাকপা রি পর্বতের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা মেলে ধরছেন মুহিত, শায়লা ও মজনু। পেছনে দেখা যাচ্ছে এভারেস্টের চূড়া। ছবি: সংগৃহীত
লাকপা রি পর্বতের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা মেলে ধরছেন মুহিত, শায়লা ও মজনু। পেছনে দেখা যাচ্ছে এভারেস্টের চূড়া। ছবি: সংগৃহীত

লাকপা রি—হিমালয় পর্বতমালার একটি শৃঙ্গ। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের প্রতিবেশী হিসেবে লাকপা রির পরিচিতি রয়েছে। এভারেস্টের শৃঙ্গে উঠে উত্তর-পূর্ব দিকে তাকালেই লাকপা রিকে দেখা যায়। তবে উচ্চতায় এভারেস্টের চেয়ে ১৮০৩ মিটার ছোট এই পর্বতশৃঙ্গ। কিন্তু ছোট হলে কী হবে, ৭০৪৫ মিটার উঁচু লাকপা রি পর্বতের আচরণ এভারেস্টের মতোই। এর শৃঙ্গে পা ফেলতে হলেও এভারেস্টের পথ ধরে যেতে হয়। তবে এভারেস্ট জয় করলেও লাকপা রির চূড়ায় কখনো ওড়েনি বাংলাদেশের পতাকা। সেই কাজ করলেন এভারেস্ট জয়ী পর্বতারোহী এম এ মুহিত। ১৭ মে বিকেলে তিনি লাকপা রি পর্বত জয় করেন। এ নিয়ে মুহিত হিমালয়ের ১১টি শৃঙ্গ জয় করলেন। 

লাকপা রি অভিযানে মুহিতের সঙ্গে আরও ছিলেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী শায়লা পারভিন, কাজী বাহালুল মজনু এবং তিনজন শেরপা।
লাকপা রির শৃঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে কিছু সময় অবস্থান করেন মুহিত, শায়লা ও মজনু। এরপর ২১ মে কাঠমান্ডু ফিরে আসেন তাঁরা। আজ মঙ্গলবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে মুহিত বলেন, বাংলাদেশ থেকে ২৯ এপ্রিল নেপালে রওনা দেন তাঁরা তিনজন। চার দিন কাঠমান্ডু থাকার পর লাকপা রির মিশন শুরু করেন। এ জন্য তিব্বতের দিকে যেতে হবে। অনুমতিও নিতে হবে চায়না-তিব্বত মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিএমএ) কাছ থেকে। তিব্বত দিয়ে যাওয়া ভীষণ কষ্টের। কারণ সেখানে নেপালের চেয়ে বেশি ঠান্ডা থাকে। বাতাসের গতিও বেশি। অক্সিজেনের অভাবও কিছুটা বেশি থাকে।

সিপিএমএর অনুমতি নিয়ে ৩ ও ৪ মে তিব্বতের কেরুং শহরে থাকেন মুহিত বাহিনী। শহরটি বেশ ঠান্ডা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শহরটির অবস্থান ৯০০০ ফুট উঁচুতে। কেরুং শহরে থেকে মুহিত তাঁর দলবল নিয়ে চলে যান তিং রি শহরে। এই শহরে ঠান্ডা আরও বেশি। কারণ শহরটি ১৪ হাজার ২০০ ফুট উঁচুতে। তিং রি থেকে ৭ মে শুরু হয় লাকপা রি জয়ে চূড়ান্ত অভিযান। এদিন চলে আসেন তাঁরা এভারেস্টে বেসক্যাম্পে। বেসক্যাম্প থেকে মিডল ক্যাম্প হয়ে আসেন এভারেস্টের অ্যাডভান্সড ক্যাম্পে। এটি ২১ হাজার ফুট উঁচুতে। বেসক্যাম্পে আসতে আসতে ১৬ মে চলে আসে। এখান থেকে ১৬ মে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মুহিত, শায়লা, মজনু আর তিনজন শেরপা যেতে থাকেন লাকপা রি পর্বত চূড়ায়। তাঁদের পাশাপাশি ইউরোপ থেকে আসা আরও দুটি দল লাকপা রি রওনা দেয়। কিন্তু শুরু হয় বিপত্তি। বৈরী আচরণ শুরু করে তুষার রাজ্য। ইউরোপের দল দুটি এই আচরণে টিকতে না পেরে ফিরে যায়। তবে এগিয়ে যেতে থাকেন মুহিতরা। রাত গড়িয়ে ভোরে সূর্যের আলো ছড়াতে শুরু করে তুষারের ওপর। চোখের সামনে লাকপা রি। কিন্তু এর চূড়া আরও বহু দূর। একজন আরেকজনের সঙ্গে দড়ি বেঁধে চূড়ার দিকে এগোতে থাকেন। এর মধ্যে আরেক দফা বিপত্তি। শক্ত বরফের পথ দিয়ে চলার সময় বড় ফাটলের মধ্যে পড়ে যান শায়লা পারভিন। টেনে তুলতে তুলতে দুপুর হয়ে আসে। এরপর আবারও যাত্রা। অবশেষে বাংলাদেশ সময় বেলা সোয়া তিনটায় লাকপা রির শৃঙ্গে পা ফেলেন মুহিত, শায়লা ও মজনু। মেলে ধরেন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।