ময়মনসিংহ-৯ আসনে আ.লীগে দুই ধারা, বিএনপিতে অস্বস্তি

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে দুবারের সাংসদ আবদুস সালামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এই সুযোগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আবেদিন খান। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে এই দুজনের নেতৃত্বে দুই ধারায় চলছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি এই লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক চৌধুরী।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে বিএনপিতেও স্বস্তি নেই। এ আসনে জাতীয় পার্টির অবস্থান বড় দলগুলোর ধারেকাছে নেই। তবে জামায়াতের বেশ প্রভাব আছে। ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নিয়েছে দলটি। আর গত ৯ জানুয়ারি নান্দাইলে জাসদের জনসভায় গিয়াস উদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৩, ’৮৬, ’৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ, ’৭৮, ’৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি এবং ’৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, ২০১৪ সালে আবদুস সালামের মনোনয়নপত্র বাতিল হলে মনোনয়ন-সংক্রান্ত আওয়ামী লীগের চিঠির দ্বিতীয় স্থানে থাকা আনোয়ারুল আবেদিন খানকে মনোনয়ন দেয় দল। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হলেও দলে পদ পাননি তিনি। একই বছর আবদুল মালেক চৌধুরী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ২০১৬ সালে রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া নান্দাইলের মেয়র নির্বাচিত হন। এই তিন নেতা একসঙ্গেই রাজনীতি করতেন।

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী সাংসদের কাছে ভিড়তে শুরু করেন। নিজের অবস্থানকে সংহত করতে সাংসদ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিগঠন করেন। আনোয়ারুল আবেদিনকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি অনুমোদন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান। এ ঘটনায় সালামের পক্ষে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের নেতৃত্বাধীন উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে বৈধতা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তবে বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সব সময়ই থাকে। সভানেত্রীই বলতে পারেন দল থেকে কে মনোনয়ন পাবেন।’ নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগে কোনো বিভক্তি নেই বলে দাবি করেন তিনি।

নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, আবদুস সালাম মনোনয়ন পাচ্ছেন ধরে নিয়েই দল গুছিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অতীতে যাঁরা দলে ভাঙন ধরাতে চেয়েছেন, তাঁদেরসহ আওয়ামী লীগকে যাঁরা ভালোবাসেন, প্রত্যেককে মূল সংগঠনে ফিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সাংসদ আনোয়ারুল আবেদিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছি। তাতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি এবং আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

একসময় সাংসদের সঙ্গে থাকলেও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক চৌধুরী নিজেই এখন মনোনয়নপ্রত্যাশী।

নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও ঔৎসুক্য রয়েছে। উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের সংগ্রামকেলি বাজার ও গাংগাইল ইউনিয়নের শাইলধরা বাজারে প্রায় ১৫ জন ভোটার বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল তাঁরা ভোগ করছেন। তবে সাধারণ মানুষ সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি ততটা সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ‘উচ্ছৃঙ্খলতা’ সাধারণ মানুষ ভালো চোখে দেখছে না।

এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির বিভক্তি দৃশ্যমান হয়। ২০০১ সালে নির্বাচিত সাংসদ খুররম খান চৌধুরী ও সৌদি আরব বিএনপির নেতা এ কে এম রফিকুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন চান। খুররম খান মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনে হেরে যান। এরপর থেকে দুই নেতার পৃথক বলয়ে চলছে দল।

খুররম খান এ আসন থেকে তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। ময়মনসিংহ-৮ আসন থেকেও তিনি একবার সাংসদ হন। তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরা বলেন, খুররম খান এবারও নির্বাচন করবেন।

রফিকুল ইসলাম বছরের বেশির ভাগ সময় সৌদি আরবে থাকেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি একাদশ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। রফিকুলের ছোট ভাই এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পৌর বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। ২০১১ সালে পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক পেলেও মেয়র পদে জিততে পারেননি।

আজিজুল ইসলাম বলেন, মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার মোকাবিলা করে তিনি নান্দাইল সদরে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড টিকিয়ে রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে তাঁর কর্মকাণ্ড দল বিবেচনা করবে।

এ ছাড়া গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা সদরের নিজ ফ্ল্যাটে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন মালয়েশিয়া বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক মামুন বিন আবদুল মান্নান।