তিন মাসের বেতন বাকি, কর্মীদের আন্দোলন

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি: প্রথম আলো
বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ছবি: প্রথম আলো

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটক বন্ধ করে অবস্থান নেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তিন মাস ধরে তাঁদের বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাঁদের।

হাসপাতালটির জ্যেষ্ঠ নার্স মৌসুমী খাতুন বলছিলেন, তাঁর পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া। আগের বছরের দুই মাস ও চলতি বছরের তিন মাস মিলিয়ে পাঁচ মাসের বেতন পাননি তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেল, চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ হাসপাতালটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্লোগান দিচ্ছেন। বলছেন, ‘এক দফা এক দাবি, আজকের মধ্যে বেতন দিতে হবে।’

হাসপাতালটির ক্যাথ ল্যাবের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বেতন নিয়ে টালবাহানা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

৫০ বছর বয়সী নার্স রোকেয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন মাসের বেতন না পেয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েছি। কীভাবে সংসার চালাব? ধারদেনা করে আর চলতে পারছি না।’

আন্দোলনকারীরা বলছেন, হাসপাতালটির ৫৭৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তিন মাস ধরে বেতন দেওয়া হচ্ছে না। বেতন না পেয়ে বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা। বকেয়া বেতনের পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা তাঁদের বেতন মাসের ৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালকে জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির সভাপতি স্থানীয় সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আগামী রোববার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক মাসের বেতন দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, এই হাসপাতালটি ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠন করে দেওয়া ব্যবস্থাপনা বোর্ড দিয়ে পরিচালিত হয়। এটি সেবামূলক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ৪০ শতাংশ দরিদ্র রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অথচ সরকারি বার্ষিক অনুদান পায় মাত্র সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে এসে ১০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তা এখনো পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এই হাসপাতালে বর্তমানে ২২টি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে ১৩২ জন চিকিৎসক, ১২৫ জন নার্স ও ৩০৬ জন অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন।

তিন মাসের বেতন কেন দেওয়া হয়নি—জানতে চাইলে কাজী ফিরোজ রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি অন্যান্য হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে স্কেলে বেতন পান, তাঁর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একই স্কেলে বেতন পাচ্ছেন। অষ্টম বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

২২ মে সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ এই সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠিতে বলা হয়, এই হাসপাতালের এখন চরম ক্রান্তিকাল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসার সরঞ্জামাদির অভাব রয়েছে। বিভিন্ন দেনার দায়ে জর্জরিত। এখন এই হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।