রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম নিরাপদ: বিএফএসএ

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে পাকানোর অভিযোগে জব্দ করা আম। পরে এই আম ধ্বংস করা হয়। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১৫ মে। ছবি: প্রথম আলো
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে পাকানোর অভিযোগে জব্দ করা আম। পরে এই আম ধ্বংস করা হয়। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১৫ মে। ছবি: প্রথম আলো

ইথোফেন অথবা কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম নিরাপদ বলে দাবি করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে গঠিত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক বলেছেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ইথোফেন-কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো ক্ষতিকর নয়।’

অপরিপক্ব আম রাসায়নিক দিয়ে পাকানোর অভিযোগে ধ্বংস করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, অপরিপক্ব আম পাকানো হলে তাতে পুষ্টির মাত্রা কম হতে পারে। কিন্তু সে আম ক্ষতিকর নয়। তাই দেশের সম্পদ ধ্বংস করা ঠিক নয়। ধ্বংসের আগে তা পরীক্ষা করা দরকার।

আজ বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে ‘মৌসুমি ফল পাকাতে বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহার ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বিএফএসএ’র চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। সম্প্রতি পুলিশ ও র‍্যাবের অভিযানে কয়েক হাজার মণ আম ধ্বংসের পরিপ্রেক্ষিতে বৈজ্ঞানিক দিকগুলো সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। যদিও অনুষ্ঠানে র‍্যাব অথবা পুলিশের অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

কর্মশালায় নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার গবেষক, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) নিরাপদ খাদ্য প্রকল্পের পরামর্শক ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের কেউ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেননি। তবে আলোচনায় উঠে আসে যে, কার্বাইড প্রয়োগ করার সময় যিনি প্রয়োগ করবেন তাঁর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই এটা দেশের আইনে নিষিদ্ধ। কিন্তু কার্বাইড ফলের ভেতরে প্রবেশ করে না। অন্যদিকে ইথোফেন প্রয়োগ সারা পৃথিবীতে বৈধ। ফলের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ইথোফেন থাকা বৈধ।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) পরিচালক (পুষ্টি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ইথোফেন-কার্বাইড তাৎক্ষণিকভাবে মাপা যায় না। তাহলে কীভাবে বুঝে ফলগুলো ধ্বংস করা হলো। তিনি বলেন, আমে ইথোফেন প্রয়োগ করা হলে সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্ধারিত মাত্রার নিচে চলে আসে।

ফরমালিন বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মুখপাত্রদের জ্ঞান এ বিষয়ে দুঃখজনক। ফরমালিন কোনোভাবেই ফল ও শাক-সবজিতে কাজ করে না। এটি কাজ করে আমিষের ক্ষেত্রে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিএফএসএর সদস্য মো. ইকবাল রউফ মামুন বলেন, ফরমালিনের দ্রবণে মাছ পাঁচ-ছয় দিন চুবিয়ে না রাখলে তা কাজ করবে না। একবার চুবিয়ে মাছের পচন রোধ করা সম্ভব নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএফএসএর চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক বলেন, ফরমালিন নিয়ে এত দিন যা হয়েছে তা ভুল। খাদ্যে ভেজালের জন্য ফরমালিন কোনোভাবেই দায়ী নয়। তিনি আরও বলেন, ঈদুল ফিতরের পরে এসব বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের জানাতে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমকে নিজে ফোন করে কর্মশালায় থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে এফএওর নিরাপদ খাদ্য প্রকল্পের পরামর্শক শাহ মুনির হোসেন বলেন, খাদ্য বিষয়ে যেকোনো অভিযানের আগে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো জেনে নেওয়া ভালো।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার শাহেদ আল মাসুদ বলেন, এ ধরনের অভিযানে বিএসটিআই অথবা মৎস্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা থাকেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত নেন।

অবশ্য বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক এসএম আবু সাঈদ বলেন, ‘ইথোফেন বা কার্বাইডের বিষয়ে আমরা কাজ করি না। অভিযানে এ বিষয়ে আমাদের পরিদর্শকেরা কোনো সিদ্ধান্ত দেন না।’

ঢাকা সিটি করপোরেশনের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটরা আমরা কিছু বলার আগেই সিদ্ধান্ত নেন।’

অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


 আরও পড়ুন...
আম নিয়ে আতঙ্ক নয়