ধর্ষণের মামলায় বিশেষ গুরুত্বদেওয়া দরকার

ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর শারীরিক-মানসিক পীড়ার সঙ্গে যুক্ত হয় লোকলজ্জা ও সামাজিক দোষারোপ। সহায়তা-সমর্থন থাকে না। থানায়, আদালতে, এমনকি আইনেও ধর্ষণের অভিযোগকারীকে বিশেষভাবে সন্দেহের চোখে দেখার প্রবণতা আছে।

বিশেষ করণীয়

১. আইনজীবী মাকছুদা আখতার বলছেন, ‘সামাজিক কলঙ্ক আর আপস-মীমাংসার প্রবল চাপ থাকে, পরিবারের লোকজন অনেক সময় প্রলোভনে পড়ে।’ তাই টানা শুনানি করে অতি দ্রুত নিষ্পত্তি ও নিবিড় নজরদারি দরকার।

২. ভুক্তভোগীর শারীরিক-মানসিক ক্ষত না বাড়িয়ে দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষাসহ আলামত সংগ্রহ করতে হবে।

সম্প্রতি হাইকোর্ট ধর্ষণের পরীক্ষায় ‘দুই আঙুলি’ পদ্ধতি বাতিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রটোকল বা নীতিমালা অনুসরণ করতে বলেছেন। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত নীতিমালাটিতে এ ধরনের সহিংসতার ক্ষেত্রে সেবাদানের বিস্তারিত নির্দেশনা আছে। নীতিমালাটি দ্রুত বাংলায় অনুবাদ করে সর্বত্র ব্যবহার করা দরকার।

৩. ডিএনএর আলামতসহ ধর্ষণ মামলার সব আলামত চিহ্নিত করা এবং সেটা সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

৪. থানা ও আদালতে নারীবান্ধব পরিবেশ চাই। মামলা চালাতে নিরুৎসাহিত করা যাবে না। ভালো, আন্তরিক, নারীবান্ধব আইনজীবী চাই। একাধিক মানবাধিকার আইনজীবী বলেছেন, সব সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) তেমন হন না।

৫. ভুক্তভোগীর সাক্ষ্যশুনানি অবশ্যই রুদ্ধদ্বার কক্ষে করা উচিত। আইনে এখন এটা করা বাধ্যতামূলক নয়।

৬. সাক্ষ্য আইনের ১৫৫-ক ধারা বাতিল করতে হবে। এই ধারার বলে আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুকে চরিত্রহীন প্রমাণ করে তার সাক্ষ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নাকচের চেষ্টা করেন।

৭. ধর্ষণের শিকার নারী একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হতে পারেন। আনুষঙ্গিক প্রমাণ না-ও থাকতে পারে। একাধিক আইনজীবী বলেছেন, বিবরণের সত্যতা সম্পর্কে নিঃসংশয় হলে বিচারক শুধু সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন।

৮. সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে ধর্ষণের শিকার নারী–শিশুকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে হবে। চিকিৎসা ও পরামর্শসেবা (কাউন্সেলিং) আর নিরাপদ আশ্রয় জরুরি। তার পরিবারকেও হুমকি-ধমকি, সামাজিক চাপ মোকাবিলায় সাহায্য করতে হবে।

৯. মেয়েটি যেন সমাজে মাথা উঁচু করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাঁচতে পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার।