আসল ফোনের মোড়কে নকল ফোন!

বাজার থেকে মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ কিনে নকল ফোন বানাত প্রতিষ্ঠানটি। আবার সেই ফোন আসল মোবাইল ফোনের আদলে মোড়কজাত করে বিক্রিও করা হতো। এমন অভিযোগে টি জে গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গত রোববার মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সাত কর্মকর্তা–কর্মচারীকে। তাঁদের এক দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম) হাজির করা হয়। আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার বাদী শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, টি জে গ্রুপের টি জে ইলেকট্রনিকস নকল মোবাইল ফোন তৈরি করে আসছিল। বাজার থেকে মোবাইলের যন্ত্রাংশ কিনে নিজেরা নকল ফোন বানিয়ে আসল মোবাইল ফোন হিসেবে বিক্রি করে আসছিল তারা।

কারাগারে পাঠানো টি জে ইলেকট্রনিকসের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন কাজী ইসতিয়াক উদ্দিন, সারোয়ার হোসেন, আফতাব উদ্দিন, মাহবুব হাসান, মহসিন আলী, মাসুদুর রহমান ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের নূর আলম। অবশ্য পলাতক আছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তাবারক উল্লাহ এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তফা হাসান।

আদালতে পুলিশ এক প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, টি জে গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আই ফোন, এলজি, এইচটিসিসহ নানান ব্রান্ডের ফোন এনে বিক্রি করছে।

আবার প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কাজী ইসতিয়াক উদ্দিনসহ গ্রেপ্তার সাত আসামি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। কাজী ইসতিয়াক তাঁর জবানবন্দিতে বলছেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান কোনো আমদানিকারক নয়। আমাদের প্রতিষ্ঠান কোনো বৈধ আমদানিকারকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেনে না। আমাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোনের বৈধ কাগজপত্র নেই।’

জবানবন্দিতে ইসতিয়াক আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা সিটি ও মোতালেব প্লাজা থেকে ব্রান্ডের বিভিন্ন মডেলের মোবাইলের খুচরা যন্ত্রপাতি, মোবাইলের ক্যাসিং, মোড়ক কিনে আনে। পরে আমাদের প্রতিষ্ঠানে যাঁরা সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন, তাঁরাই বিভিন্ন মডেলের নকল মোবাইল ফোন তৈরি করেন। এরপর সেই মোবাইল ফোন আসল মোবাইল ফোনের আদলে মোড়কজাত করে বিক্রি করা হয়।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার এসআই জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টি জে গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, মহাখালী ডিওএইচএসে টি জে ইলেকট্রনিকসের অফিস। আসামিরা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আইফোন, এলজি, এইচটিসিসহ অন্যান্য ব্রান্ডের মোবাইল ফোন বিক্রি করে। আসামিরা পুরোনো মোবাইল কিনে বা ওই সব ব্রান্ডের যন্ত্র বিভিন্ন মার্কেট থেকে কিনে নকল আইফোন, এলজি, এইচটিসিসহ নানা ব্রান্ডের ফোন তৈরি করেন।

গত শনিবার টি জে ইলেকট্রনিকসের অফিসে শুল্ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যান। তখন সেখানে কিছু আইফোন, এলজি, এইচটিসি ব্রান্ডের মোবাইল ফোন দেখতে পাওয়া যায়। তখন মোবাইল ফোনের স্বপক্ষে কাগজপত্র চাইলে প্রতিষ্ঠান তা দেখাতে ব্যর্থ হয়। টি জে ইলেকট্রনিকস থেকে ৩৭টি আইফোন, ১৫টি এলজি, ১২৫টি এইচটিসি ফোন জব্দ করা হয়।