বগুড়ায় দুই সেমাই কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

পুরো কারখানায় নোংরা, ঘিঞ্জি ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। চারদিকে পচা দুর্গন্ধ। কারিগরদের শরীর থেকে ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম। এরই মধ্যে খালি পায়ে কারিগররা দলে চলেছেন খামির। তাতে মেশানো হচ্ছে কাপড়ের রং। ভাজা হচ্ছে বাসি তেলে। এই দৃশ্য দেখা গেছে ‘লাচ্ছাপল্লি’খ্যাত বগুড়ার কাহালু উপজেলার শেখাহার বাজারের শামিম লাচ্ছা সেমাই কারখানায়।

বুধবার শামিম লাচ্ছা কারখানাসহ শেখাহার বাজারের দুটি অবৈধ সেমাই কারখানায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে একটি কারখানা থেকে ২ হাজার ৬০০ কেজি লাচ্ছা সেমাই জব্দ করার পর তা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। কারখানা মালিককে দেওয়া হয়েছে ১৫ দিনের কারাদণ্ড। অপর কারখানা থেকে জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।

রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসন এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এতে নেতৃত্ব দেন বগুড়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ মহল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানা দুটির বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন ছিল না। সেখানে খালি গায়ে ও পায়ে দলে কারিগরেরা খামির তৈরি করছিলেন। খামিরে মেশানো হচ্ছিল পোশাক কারখানায় ব্যবহৃত ক্ষতিকর কাপড়ের রং। খোলা জায়গায় বাসি তেলে এসব লাচ্ছা সেমাই ভাজা হচ্ছিল। কারিগরেরা ঘামে ভেজা হাতেই গরম তেলে ময়দার খামির ছাড়ছিলেন। কারখানার পরিবেশ ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ঘিঞ্জি, নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে।’

অর্থদণ্ড আদায় করা সেমাই কারখানাটি হলো কাশ্মীর লাচ্ছা। কারখানাটির মালিক জাকির হোসেনকে সাত দিনের মধ্যে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও বিধিসম্মতভাবে লাচ্ছা তৈরির জন্য সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান মমতাজ মহল।

শামিম লাচ্ছা কারখানার মালিকের নাম আবু বকর। বিএসটিআইয়ের রাজশাহী অঞ্চলের মাঠ কর্মকর্তা দেবব্রত বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কারখানা থেকে দুই কেজি কাপড়ের রংসহ জব্দ করা হয়েছে বিক্রির জন্য মজুত করা ২ হাজার ৬০০ কেজি লাচ্ছা সেমাই।

দেবব্রত বিশ্বাস জানান, কাশ্মীর লাচ্ছা কারখানার মালিক বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি আবেদন করেছেন। এ কারণে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে লাচ্ছা সেমাই তৈরি ও কাপড়ের রং ব্যবহার না করার জন্য এর মালিককে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে লাচ্ছা উৎপাদন নিশ্চিত করা না হলে কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ একে এম আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, কাপড়ের রঙে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ‘নেফ্রোটক্সিক’ রয়েছে। এটি এক ধরনের বিষ। এই রং মানবদেহের কিডনি বিকল করে দিতে পারে। এই রং খাদ্যদ্রব্যে মেশালে মানুষের ক্যানসারও হতে পারে।