'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত আরও ৩

পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে রাজধানী ঢাকা, কুমিল্লা ও যশোরে আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন ঢাকায় জসীমউদ্দীন মুন্সী (২৩), কুমিল্লায় কালা স্বপন (৩৯) ও যশোরে মেহেদী হাসান ওরফে রাজু (২৫)। গত শনিবার গভীর রাতে ও গতকাল রোববার ভোরে এই তিনটি ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে। 
পুলিশের দাবি, জসীমউদ্দীন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং কালা স্বপন সন্ত্রাসী। র‌্যাবেরদাবি, মেহেদী ভাড়াটে খুনি ছিলেন।
এ নিয়ে গত ২৩ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৮ জন নিহত হলেন। নিহত ব্যক্তিদের আটজন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও তিনজন ছাত্রদলের নেতা-কর্মী। রাজধানীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন নয়জন। এ ছাড়া গত ২৬ জানুয়ারি রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটকের পর ‘ট্রাকচাপায়’ ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক কর্মী নিহত হন। র‌্যাবেরদাবি, তিনি গাড়ি থেকে পালাতে গিয়ে ট্রাকের নিচে পড়েন। ২ ফেব্রুয়ারি রাতে যশোরে বিএনপির সমর্থক ইউসুফ আলী ও মো. লিটনও ‘ট্রাকচাপা’য় নিহত হন। পুলিশের দাবি, পেট্রলবোমা ছোড়ার সময় তাঁরা ট্রাকচাপায় মারা যান।
গতকাল ভোরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মাদ্রাসাছাত্র জসীমউদ্দীন মুন্সী। পুলিশের ভাষ্য, জসীমউদ্দীন ছাত্রশিবির করতেন। শনিবার শ্যামলীতে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট গোলাম মাওলার ওপর হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে জসীমসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে জসীম জানান, শিবিরের সন্ত্রাসীরা রাত তিনটা থেকে চারটার মধ্যে তালতলা নতুন রাস্তায় অবস্থান করবে। সে অনুযায়ী পুলিশ সেখানে গেলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা জসীমকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশ পাল্টা ২১টি গুলি চালায়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের গুলিতে জসীম মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল ও চারটি পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
সার্জেন্ট গোলাম মাওলার ওপর হামলার ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় পুলিশের করা মামলার ৬ নম্বর আসামি ছিলেন জসীম। মর্গ সূত্র জানায়, জসীমের শরীরে গুলির ১৭টি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলে সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল বেলা একটার দিকে জসীমের ভাই আনিসুর রহমান মুন্সী ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। আনিসুর বলেন, তাঁর বোন হাফিজা শনিবার সন্ধ্যার দিকে ফোন করে জানান, জসীমকে আগারগাঁও থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তখন তিনি শেরেবাংলা নগর থানায় খবর নিয়েও খোঁজ পাননি। সকালে টেলিভিশনে খবর দেখে মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। তিনি জানান, কাজীপাড়া ফাজিল মাদ্রাসায় ফাজিল (স্নাতক) শ্রেণিতে পড়তেন জসীম। তিন ভাই, চার বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ ছিলেন। গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদরে। থাকতেন সেনপাড়া পর্বতার একটি মেসে। এক বছর আগে মিরপুর থানায় জামায়াত-শিবিরের অন্য নেতাদের সঙ্গে একটি মামলার আসামি করা হয়েছিল জসীমকে। তবে জসীম কোন দলের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন, তা তিনি জানেন না।
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা জানান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ভাটপাড়ায় শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পুলিশের তালিকাভুক্ত ১ নম্বর সন্ত্রাসী কালা স্বপন নিহত হন। সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রশান্ত পাল বলেন, শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলার নন্দনপুর থেকে কালা স্বপনকে আটক করে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ। তাঁকে সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাঁকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য তাঁর গ্রামের বাড়ি রামপুর যাওয়ার পথে রাত দেড়টার দিকে ভাটপাড়ায় তাঁর অনুসারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশ পাল্টা ২০টি গুলি করে। এ সময় কালা স্বপন পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত হন পুলিশের দুই উপপরিদর্শক (এসআই) ও তিন কনস্টেবল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার, দুটি গুলি ও একটি ছুরি উদ্ধার করে। পরে কালা স্বপনের লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ।
বিকেলে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ জানায়, কালা স্বপনের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ মোট ২৮টি মামলা রয়েছে। তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগঞ্জের (স্থানীয়ভাবে সুয়াগাজী বলা হয়) চিহ্নিত মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাঁর বাবার নাম কালা মিয়া। সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবলীগের সদস্য মোস্তাক হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি ছিলেন স্বপন। তিনি পদুয়ারবাজার এলাকার যুবলীগের কয়েকজন কর্মীর সহযোগী ছিলেন।
এ নিয়ে ৪৫ ঘণ্টার ব্যবধানে কুমিল্লায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হলেন। শুক্রবার ভোরে চৌদ্দগ্রামের শামুকসার নাভানা প্রকল্পের সামনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী (২৫) নিহত হন।
যশোর অফিস জানায়, যশোর সদর উপজেলার কাজীপুর গ্রামে একটি ইটভাটায় শনিবার মধ্যরাতে র‌্যাব-৬-এর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন মেহেদী হাসান ওরফে রাজু। তিনি শহরের নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু (গাড়িখানা) সড়কের বাসিন্দা আজিবর রহমানের ছেলে।
র‌্যাব-৬-এর মেজর আশরাফুজ্জামান বলেন, শনিবার রাত নয়টার দিকে রাজুকে তাঁর বাড়ি থেকে আটক করে মধ্যরাতে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য কাজীপুর গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে নেওয়া হয়। সেখানে থাকা সন্ত্রাসীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করলে আত্মরক্ষার্থে র‌্যাবও চারটি গুলি করে। পরে ঘটনাস্থলে রাজুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি বন্দুক, তিনটি গুলি ও ২৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।
মেজর আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘রাজু ছিল ভাড়াটে খুনি। তার নামে হত্যাসহ সাতটি মামলা রয়েছে। এলাকায় সে ভাইপো রাজু নামে পরিচিত।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে নিহত রাজুর বোন শারমিন বেগম অভিযোগ করেন, শনিবার রাত আটটার দিকে র‌্যাবেরলোকজন বাড়ি থেকে রাজুকে ধরে মারতে মারতে নিয়ে যান। পরে র‌্যাব ক্যাম্পে গেলে রাত ১২টার পর তাঁকে থানায় পাঠানোর কথা জানানো হয়। সকালে রাজুর লাশ হাসপাতালের মর্গে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘র‌্যাব গুলি করে রাজুকে হত্যা করেছে। সব কটি মামলায় রাজু জামিনে ছিল।’