সম্পাদক সরকারি কর্মকর্তা কার্যক্রম চলছে 'ঢিমেতালে'

মোহাম্মদ নাছিম মিয়া ও মোবারক হোসেন
মোহাম্মদ নাছিম মিয়া ও মোবারক হোসেন
>
  • কদমতলী থানা আওয়ামী লীগ
  • সাধারণ সম্পাদক অগ্রণী ব্যাংকের রমনা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার।
  • অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি দলীয় কাজে সময় কম দেন বলে অভিযোগ আছে।

চাকরির নীতিমালা লঙ্ঘন করে অগ্রণী ব্যাংকের রমনা শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মোবারক হোসেন কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি অগ্রণী ব্যাংক অফিসার সমিতির কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের অগ্রণী ব্যাংক শাখার সভাপতির দায়িত্বেও আছেন।
কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীদের অভিযোগ, মোবারক হোসেন ব্যাংক এবং ব্যাংকসংশ্লিষ্ট এসব সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকায় দলীয় কার্যক্রমে সময় কম দেন। এতে দলীয় কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে।
এই থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছিম মিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, থানার প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে তাঁর পছন্দের লোকজন প্রাধান্য পেয়েছেন। একই অভিযোগ আছে এই থানার ৫২ ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং শ্যামপুর ইউনিয়নের প্রস্তাবিত কমিটির ব্যাপারেও।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ২০১৬ সালের এপ্রিলে নাছিম মিয়াকে সভাপতি ও মোবারক হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে কদমতলী থানার আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। একই সময়ে এ থানার ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে ফারুক হোসেনকে সভাপতি ও জিল্লুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে সোহরাব হোসেনকে সভাপতি ও মহাব্বত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক এবং কাজী মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহকে সভাপতি ও আমিনুল ইসলামকে সম্পাদক করে শ্যামপুর ইউনিয়নের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়।
পরে গত বছরের মার্চে ওয়ারী থানা এবং এই তিন ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ছয় সদস্যের উপকমিটি গঠন করা হয়। জুলাইতে ওই চারটি কমিটির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ তালিকা মহানগরে জমা দেওয়া হয়। মহানগর সে তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠিয়েছে। কিন্তু এখনো কমিটিগুলো ঘোষণা করা হয়নি। এর মধ্যে কদমতলী থানা কমিটির ৭১ এবং ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোতে ৬৯ সদস্যের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০০৮-এর সপ্তম অধ্যায়ে সাধারণ আচরণ ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন না, ইহার সাহায্যার্থে চাঁদা দান বা অন্য কোনো উপায়ে উহার সহায়তা করবেন না এবং ব্যাংকের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে নিজেকে জড়িত করবেন না।’ এই বিধিমালা লঙ্ঘন করে মোবারক হোসেন কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এর আগেও তিনি কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অগ্রণী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, মোবারক হোসেন কদমতলী থানা কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পরই আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোবারক হোসেনের ছবিসহ পোস্টার ও থানা কমিটি তালিকা তদন্ত কমিটির কাছে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ‘এই মোবারক, সেই মোবারক নয়’ বলে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অথচ এখন মোবারক নিজেই সবকিছু স্বীকার করছেন। দলের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস-উল-ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে চাকরি প্রবিধানমালায় কী আছে, সে সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে দাবি করেছেন মোবারক হোসেন।
সংগঠনে সময় দেওয়ার বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিয়মিত কর্মীদের নিয়ে কদমতলীর বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক করছেন। কর্মীদের ভালো-মন্দ খোঁজখবর রাখছেন।
অন্যদিকে নিজের পছন্দের কর্মীদের বড় পদ দেওয়ার বিষয়ে কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নাছিম মিয়া বলেন, ওই উপকমিটি ও কদমতলীর তৃণমূলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়েই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এখানে কারও পক্ষে-বিপক্ষে কিছু নেই।