নিখোঁজের ৭২ দিন পর মেঝে খুঁড়ে বের হলো লাশ

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

মেহেদী হাসান এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু এই ফল নিয়ে পরিবারে কোনো উচ্ছ্বাস ছিল না। কারণ মেহেদী তখন নিখোঁজ। ৭২ দিন পর গতকাল বুধবার মধ্য রাতে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কেশোরগঞ্জ বাজারের একটি ঘরের মেঝে খুঁড়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ বলছে, প্রেমের বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী তরুণ তুষার ও আল আমিন মেহেদীকে তুলে নিয়ে যায়। কেশোরগঞ্জ বাজারে তুষারের বড় ভাই উজ্জ্বলের একটি গোডাউনে নিয়ে তাকে হত্যা করে ওই ঘরের মেঝেতে মাটিচাপা দেয়। গতকাল আল আমিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মেহেদির লাশ উদ্ধার হয়।

মেহেদির বাবা শাজাহান আলী দুবাই প্রবাসী ছিলেন। মা মিনারা খাতুন ছেলের নিখোঁজের পরপরই অভিযোগ করেন গত ৬ মার্চ একই গ্রামের তুষার মেহেদীকে অপহরণ করেছে। ১২ মার্চ তিনি তুষারকে আসামি করে ফুলবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। কিন্তু পুলিশ মেহেদী খুঁজতে খুব বেশি তৎপর নয় দাবি করে গত ৪ এপ্রিল ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।

পুলিশের দাবি, মামলার পর তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সে মেহেদীকে অপহরণ বা হত্যার কথা অস্বীকার করে। তুষার এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় আদালত থেকে জামিন পায়। গতকাল রাতে তুষারকে আবারও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মেহেদী ফুলবাড়িয়া উপজেলার পলাশহাটী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পাস করে। তাকে ফিরে পেতে সম্প্রতি পরিবারের পাশাপাশি তার স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী ও এলাকাবাসী ফুলবাড়িয়ায় মানববন্ধন করে।

ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও মেহেদির পরিবার সূত্রে আরও জানা যায়, মেহেদির মেয়ে বন্ধুকে উত্ত্যক্ত করত তুষার। এর প্রতিবাদ করায় মেহেদির সঙ্গে তুষারের বিরোধ বাধে। এর জের ধরে গত ৬ মার্চ তুষার ও তাঁর সহযোগীরা মেহেদীকে অপহরণ করে। অপহরণের পর ওই গোডাউনে নিয়ে মাথায় আঘাত করে মেহেদীকে হত্যা করে তুষার। এরপর গোডাউনের মেঝেতে মেহেদির লাশ মাটিচাপা দিয়ে তুষার ও আল আমিন ঢাকায় চলে যায়। ঢাকা থেকে মেহেদির ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর থেকে মিনারা খাতুনের কাছে ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মিনারা খাতুন মুক্তিপণ দিতে রাজি হন। তবে এরপর মুঠোফোন নম্বরটি আর খোলা পাননি মিনারা খাতুন। পরে ১২ মার্চ তুষারকে আসামি করে মামলা ফুলবাড়িয়া থানায় মামলা করেন।

ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুর রহমান বলেন, তুষার ও আল আমিনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সেটা জানার চেষ্টা চলছে।