বেনারসিপল্লিতে ক্রেতা নেই

সড়ক কেটে রাখায় বেচাবিক্রি কমে গেছে মিরপুরের বেনারসিপল্লিতে। অলস সময় কাটছে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের। গত মঙ্গলবার তোলা ছবি।  প্রথম আলো
সড়ক কেটে রাখায় বেচাবিক্রি কমে গেছে মিরপুরের বেনারসিপল্লিতে। অলস সময় কাটছে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের। গত মঙ্গলবার তোলা ছবি। প্রথম আলো
>
  • এ বছর রোজায় বেনারসিপল্লির চেহারা একেবারেই ভিন্ন।
  • রোজার প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বেনারসিপল্লি ক্রেতাশূন্য।
  • যানজট-খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ক্রেতারা আসছে না।
  • ঐতিহ্যবাহী শাড়ির বাজারে মন্দা।

মিরপুর বেনারসিপল্লিতে ঢুকে দেখা গেল দোকানগুলো ক্রেতাশূন্য। বিক্রেতারা নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করে সময় পার করছেন। কেউ মোবাইলে গেমস খেলছেন, কেউবা আবার চেয়ার জড়ো করে শুয়ে আছেন। ক্রেতা ডাকার দায়িত্বে থাকা ছেলেরা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, যদি ক্রেতার দেখা মেলে। বোঝাই যায় না ঈদের মৌসুম চলছে।

গত মঙ্গলবার মিরপুর ১০ নম্বরের বেনারসিপল্লি ঘুরে দেখা যায়, এ বছর রোজায় একেবারেই ভিন্ন চেহারা। প্রতিবছর শবে বরাতের পর থেকেই এখানে বিক্রির মৌসুম শুরু হয়। রোজা শুরু হলে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। বাড়তি ক্রেতা সামলাতে থাকে নানান আয়োজন।

এবার রোজার প্রথম সপ্তাহ প্রায় পেরিয়ে গেলেও বেনারসিপল্লি একরকম ক্রেতাশূন্য। বিক্রেতারা বলছেন, বেচাকেনা নেই। লাভের দূরের কথা, দোকান চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো দোকানে কর্মী কমিয়ে ফেলা হয়েছে।

মেট্রোরেলের কাজে বেগম রোকেয়া সরণিতে যানজট, বেনারসিপল্লির বিভিন্ন গলিতে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ক্রেতারা বেনারসিপল্লিতে আসতে আগ্রহী হন না বলে জানান বিক্রেতারা। সে কারণেই ঐতিহ্যবাহী এই শাড়ির বাজারে এমন মন্দা।

ঘুরে দেখা যায়, বেনারসিপল্লির দুটি অ্যাভিনিউ এবং তিনটি লেনের রাস্তা ভাঙাচোরা। পয়োনালার পাইপ বসানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। কোথাও পাইপ বসানোর কাজ চলছে, কোথাও শেষ হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়ির বর্জ্য কোথাও কোথাও স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এসব গলিতে যান চলাচলের সুযোগ নেই।

মেট্রোরেলের কাজের জন্য অনেকগুলো মোড় বন্ধ রাখা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বেনারসিপল্লির ১ নম্বর গেটটি দিয়েও গাড়ি ঢুকতে পারে না। এখানে আসতে হলে অনেকটা পথ ঘুরতে হয়। এই গেট খুলে দিলে ক্রেতাদের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়।

তাওসিফ বেনারসি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান বলেন, আগে রমজানের এ সময় দিনে দেড়-দুই লাখ টাকা বিক্রি হতো। এখন দিনে হাজার দশেক টাকার শাড়ি বিক্রি করাও কঠিন।

বেশ কয়েকটি দোকানে কথা বলে জানা যায়, দিনে মাত্র চার-পাঁচটি শাড়ি বিক্রি হয়। বেনারসি পালকি দোকানে শাড়ি দেখছিলেন আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা সিনথিয়া আহমেদ। বেশ কয়েকটি শাড়ি দেখে একটি নীল রঙের কাতান কিনলেন। তিনি বলেন, ‘আগে উৎসবে কেনাকাটা করতে বেনারসিপল্লিতে আসতাম। এখন রাস্তা এত খারাপ আর যানজট থাকে যে আসাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

মিরপুর ১০ নম্বরের বেনারসিপল্লিতে শাড়ির দোকান ১৬২টি। দোকান ভাড়া, কর্মীদের বেতন দিতে না পারায় ইতিমধ্যে চার-পাঁচটি দোকান বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। আবার অনেকে খরচ কমাতে কর্মী ছেঁটে ফেলেছেন। ১৯৯৪ সালে চালু করা হয় রিমঝিম শাড়ি ফ্যাশন। এ দোকানে এখন কর্মীর সংখ্যা ৯, যা আগে ১৫ জন ছিল বলে জানায় দোকানের বিক্রয় নির্বাহী হারিস আহমেদ।

দোকানদারেরা জানান, প্রায় বছর দুই ধরে বেনারসিপল্লি ভেতরের রাস্তাগুলোয় উন্নয়ন ও পাইপ বসানোর কাজ চলছে। রাস্তা এমন করে কেটে রাখা হয়েছে যে অধিকাংশ সড়কে গাড়ি চলে না। এ বছর বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ। রোজার আগেই কাজ শেষ করা উচিত ছিল বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেগা প্রকল্পের আওতায় এই ওয়ার্ডের ১৭টি লেনের পয়োনালা, ফুটপাত ও সড়ক উন্নয়নের কাজ হচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে বেনারসিপল্লিতে কাজ হচ্ছে। কাজ শুরুর আগে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।