নির্বাচনের বছরে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বাড়ার আশঙ্কা

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বারবার ধর্মকে ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার পথ হিসেবে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। নির্বাচনের বছরে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আরও বেগবান হবে বলেও আশঙ্কা করেন তাঁরা।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তাঁরা এসব কথা বলেন। ‘অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের তিন দশক’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। ২০ মে ছিল পরিষদের প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর। এ উপলক্ষে সভাটির আয়োজন করা হয়।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তাতে বলা হয়, বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে, সমঝোতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে দেখা যাচ্ছে। অতীতে বা বর্তমানে সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, এমন কাউকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে যাতে ভোট দিতে পারে, তার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, দেশের পরিস্থিতি যা, যাতে বলা যায়, দিনে দিনে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আরও বেগবান হবে। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা তীব্রতর হবে।
দেশকে নব্য পাকিস্তান করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য অস্তিত্বের সংকট চলছে। পেছনের দরজা দিয়ে এসে পাকিস্তানের ভূত দেশটা দখল করে নিচ্ছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে যারা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করছে, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখি না। সংখ্যালঘুদের জন্য নির্বাচন ‘শাখের করাত’। ভোট দিলেও বিপদ, না দিলেও বিপদ।
ধর্মের রাজনীতিকীকরণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুরা একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে, এই ধারণা দূর করা উচিত। জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হলে বৈষম্য আরও বাড়বে।
শুক্রবার ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী। কবির স্মরণে সভা শুরু করা হয় তাঁর রচিত ‘সাম্যবাদ’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিউবার্ট গোমেজের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।