মাদকবিরোধী অভিযানে আরও ৯ জন নিহত

দেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে গতকাল শুক্রবার রাতের বিভিন্ন সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও নয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বরগুনা ও দিনাজপুর থেকে দুই মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার ১২তম দিনে এখন পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার সংখ্যা ৭২–এ দাঁড়িয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, গতকাল রাতে বন্দুকযুদ্ধের পর প্রতিটি ঘটনাস্থল থেকেই ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য, পিস্তল, গুলিসহ দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

১৯ মে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকার মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) নীতি অবলম্বন করেছে।
গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যত দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, তত দিন এ অভিযান চলবে। আরও প্রত্যন্ত এলাকায় এ অভিযান ছড়িয়ে দেওয়া হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে , তাঁদের নাম অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ১৪ মে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে মাদক কেনাবেচায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

প্রথম আলোর আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
জয়পুরহাট: গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার দিকে জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভীমপুরের কে টি ইটভাটায় মাদক চোরাকারবারিরা একত্র হয়েছে—এমন খবর আসে। এর ভিত্তিতে জয়পুরহাট র‌্যাব-৫ ক্যাম্পের টহল সদস্যরা সেখানে গেলে চোরাকারবারিরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রেন্টু শেখ ওরফে রিন্টু নামের একজনকে পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হন বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়।

রিন্টুর বাড়ি উপজেলার উত্তর গোপালপুর গ্রামে। তাঁর বিরুদ্ধে জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে নয়টি মামলা রয়েছে।

চাঁদপুর: কচুয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধ বাবলু (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল দিবাগত রাত তিনটায় উপজেলার তারাগাও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, তাঁর বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

কুমিল্লা: পুলিশের ভাষ্য মতে, ব্রাহ্মণপাড়ার শশীদল ইউনিয়নের বাগড়া এলাকায় গতকাল রাত দেড়টার দিকে পুলিশ মাদক উদ্ধার করতে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এ ঘটনায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়। আহত হন এএসপিসহ চার পুলিশ সদস্য।
পুলিশ বলছে, নিহত দুজন পুলিশের তালিকাভুক্ত চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এ সময় ।
ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি সৈয়দ আবু মো. শাহজাহান কবির প্রথম আলোকে বলেন, মালেকের বিরুদ্ধে ১৬টি ও আলমাসের বিরুদ্ধে মাদকের ৮টি মামলা রয়েছে। তাঁরা পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন।

বরগুনা: সদর থানার ওসি মাসুদুজ্জামান বলেন, রাত তিনটার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার ৪ নং কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়ন জাকিরতবক এলাকায় দুই দল মাদক ব্যবসায়ী টাকা ভাগাভাগি মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময় হওয়ার খবর পায় পুলিশ। পরে আজ শনিবার ভোররাত সাড়ে চারটায় পুলিশ সেখানে গেলে একজনের লাশ পায়। নিহত ব্যক্তির নাম সগীর হোসেন। বাড়ি সদর উপজেলায়। তাঁর নামে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে আটটি মামলা রয়েছে।

দিনাজপুর: র‍্যাব দিনাজপুর ক্যাম্পের মিডিয়া কর্মকর্তা খন্দকার গোলাম মর্ত্তূজা বলেন, গতকাল রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব–১৩–এর সদস্যরা বীরগঞ্জের মরিচা ইউনিয়নের বাসুদেবপুর এলাকায় অভিযানে যায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীদের একটি দল র‍্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‍্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় সাবদারুল গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে দিনাজপুরের বিভিন্ন থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে করা ২৭টি মামলা এবং ডলার, অস্ত্রসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

অন্যদিকে, দিনাজপুর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল রাতে সদর উপজেলার রামসাগর এলাকায় একদল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পুলিশ গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গেলে সালামকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পায়। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সালামের বিরুদ্ধে দিনাজপুরে ৮টি মাদকের মামলা রয়েছে।

পাবনা: সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর গ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবদুর রহমান (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। তাঁর বাড়ি ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামে। পুলিশের দাবি, আবদুর রহমান তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে নয়টি মাদকের মামলা রয়েছে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, গতকাল আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁকে নিয়ে রাতে মাদকবিরোধী অভিযানে যায় পুলিশ। এ সময় আগ থেকে ওত পেতে থাকা আবদুর রহমানের সহযোগীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময় হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আবদুর রহমানকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঠাকুরগাঁও: পুলিশের ভাষ্য, সদর উপজেলার পশ্চিম বেগুনবাড়ি এলাকায় একদল মাদক ব্যবসায়ী অবস্থান করছে—এমন খবর পেয়ে ঠাকুরগাঁও থানার পুলিশ অভিযান চালায়। সে সময় দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময় হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোবারক হোসেন ওরফে কুট্টি (৪৫) নিহত হন।
পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ জানান, কুট্টি ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় মাদকের ১৫টি মামলা রয়েছে।

ময়মনসিংহ: ঈশ্বরগঞ্জের আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের রায়ের বাজার পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক খন্দকার আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তেলোয়ারি গ্রামের এক নির্জন রাস্তায় একদল মাদক ব্যবসায়ী মাদক ভাগাভাগি করছেন—এ খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি ছুড়তে শুরু করেন। এ ঘটনায় ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি শান্ত হলে শাহজাহানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সড়কে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসক শাহজাহানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার উত্তর বনগাঁও গ্রামে।

কুড়িগ্রাম: ভূরুঙ্গামারীতে আজ ভোররাতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তির নাম ইব্রাহীম আলী (৩৪)। তাঁর বাড়ি ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রামে।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ারুল হক প্রামাণিক বলেন, ভূরুঙ্গামারী থেকে সকালে রোগীকে আহত অবস্থায় কুড়িগ্রাম হাসপাতালে আনলে সকাল নয়টায় মারা যান।

ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, মাদক চোরাকারবারিদের গুলিতে এএসআই নাদের ও আইয়ুব নামেন দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নিহত ইব্রাহীমের নামে ভূরুঙ্গামারী থানায় চারটি মাদকের মামলাসহ কুড়িগ্রামের অন্যান্য থানায়ও মামলা রয়েছে।