ধনী-নির্ধন এক পাতে

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদে একসঙ্গে ইফতারে অংশ নেন অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ। গতকাল ইফতারের আগের দৃশ্য।  ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদে একসঙ্গে ইফতারে অংশ নেন অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ। গতকাল ইফতারের আগের দৃশ্য। ছবি: প্রথম আলো

আসরের নামাজ শেষ হতেই লম্বালম্বি মুখোমুখি হয়ে বসে পড়েছেন মুসল্লিরা। ছয়টি সারিতে নানা বয়সের, নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ। সবাই শুনছিলেন বয়ান। এর মধ্যেই চলছিল ইফতারসামগ্রী বণ্টনের কাজ। হাত ঘুরে ঘুরে সেই ইফতারির প্লেট পৌঁছে যাচ্ছিল প্রত্যেক মুসল্লির সামনে। মসজিদের মাইকে মাগরিবের আজান পড়তেই সবাই একসঙ্গে ইফতার শুরু করেন।

গতকাল শুক্রবার বিকেলের চিত্রটি নগরের আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের খোলা বারান্দার। প্রতিবছর পবিত্র রমজানের শুরু থেকেই এখানে ইফতারের বড় আয়োজন করা হয়। শেষ রমজান পর্যন্ত চলে এ আয়োজন। রমজানের প্রথম দিকে দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ ইফতার করলেও শেষের দিকে এসে সেই সংখ্যা প্রায় চার হাজারে এসে পৌঁছায়। এখানে কে ধনী কে গরিব, তার কোনো ভেদাভেদ নেই। বেশি সওয়াবের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিনভর রোজা শেষে ইফতারের জন্য জড়ো হন এই মসজিদে।

শাহি জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদের সদস্য শহীদ হোসেন বলেন, ভিন্ন রকমের এই ইফতার আয়োজনের চিন্তা প্রথম মাথায় আসে মসজিদের খতিব সাইয়্যিদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানীর। তিনি সৌদি আরবের মক্কা-মদিনার আদলে সবার জন্য একসঙ্গে ইফতারের রেওয়াজ চালু করার চিন্তাভাবনা করতে থাকেন। সেই চিন্তা থেকে ২০০৫ সালে সীমিত পরিসরে ইফতারের আয়োজন করেন। তবে ২০০৭ সাল থেকেই সেটি বড় আকারে রূপ পায়।

খতিবের একান্ত সহকারী মো. হাসান মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই ইফতারের জন্য চার-পাঁচজন বিত্তবান সহযোগিতা করে আসছেন। তবে তাঁরা কেউই নাম প্রকাশে আগ্রহী নন। এ ছাড়া আরও অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁদের সহযোগিতা এবং খতিবের একান্ত উদ্যোগে প্রতিবছর এটি বাস্তবায়ন করা হয়। সার্বিক সহযোগিতা করে শাহি জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদ।

মো. হাসান মুরাদ আরও বলেন, রোজাদারদের জন্য আট পদের ইফতারসামগ্রীর আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে জিলাপি, মুড়ি, খেজুর ও শরবত বাইরে থেকে আনা হয়। বাকি ছোলা, সমুচা, পেঁয়াজি, আলুর চপ নিজস্ব পাচক দিয়ে বড় বড় পাতিলে পাকানো হয়।

মসজিদে দীর্ঘদিন ধরে পাচকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ইয়াছিন বাবুর্চি। তিনি বলেন, সকাল ছয়টা থেকে ইফতারি তৈরি শুরু হয়। একনাগাড়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে রান্না। তাঁকে সহযোগিতা করেন আরও ৯ জন পাচক।

কথা হয় মোহাম্মদ আবু তালেব নামের এক মুসল্লির সঙ্গে। নগরের রেয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায় তাঁর ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান। আবু তালেব বলেন, প্রতিদিন আসরের নামাজের পর এখানে চলে আসি। কারণ সবার সঙ্গে ইফতার করলে সওয়াবও বেশি।