দালাল-পুলিশ মিলে যাত্রী হয়রানি

বেনাপোল স্থলবন্দর
বেনাপোল স্থলবন্দর

বুধবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিট। ভারত-বাংলাদেশের শূন্যরেখা পেরিয়ে লাইন ধরে যশোরের বেনাপোল তল্লাশিচৌকিতে আসছেন যাত্রীর দল। বড় ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে দুই পুলিশ সদস্য যাত্রীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে পাশে থাকা দালালের কাছে দিচ্ছেন। পাঁচ-ছয়টি পাসপোর্ট জমা হলেই ওই দালাল যাত্রীদের নিয়ে একটু দূরে সরে যাচ্ছেন। করছেন দেনদরবার। যাত্রীদের সঙ্গে চলছে দালাল ও পুলিশের বাগ্বিতণ্ডা।

পোশাক পরা যে পুলিশ সদস্য যাত্রীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে দালালের কাছে দিচ্ছিলেন, তাঁর বুকে লাগানো নেমপ্লেটে লেখা আসাদ। যাত্রীদের পাসপোর্ট নিয়ে দালালের কাছে দিচ্ছেন কেন? উত্তরে বলেন, ‘সিল মারার জন্য ওই পাসপোর্ট ওরা (দালাল) নিয়ে পুলিশের কাছে দিচ্ছে।’ তারা তো পুলিশের কেউ না, তাহলে?-এর উত্তরে আমতা আমতা করে বললেন, ‘আমি কনস্টেবল। ওসি সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

পাশেই একজন যাত্রীর ব্যাগ ধরে টানাটানি করছিলেন কয়েকজন দালাল। সেখানে দাঁড়াতেই দালালদের দুজন দ্রুত এগিয়ে এসে পাসপোর্ট চাইলেন। পাসপোর্ট নেই জানালে তাঁরা পরিচয় জানতে চান। পরিচয় দিতেই সরে পড়েন। যে যাত্রীর ব্যাগ ধরে দালালেরা টানাটানি করছিলেন, তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার পাসপোর্টটি পুলিশ ওদের কাছে তুলে দেয়। পাসপোর্টে সিল লাগানোর জন্য ওরা ৩০০ টাকা দাবি করে। আমি দিতে রাজি হইনি বলেই তারা ব্যাগ কেড়ে নিচ্ছিল। পরে ২০০ টাকা দিয়ে দফারফা করেছি।’ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে তাঁর বাড়ি। বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মতো এসেছেন। দালাল-পুলিশের এমন আচরণ তিনি আগে কখনো দেখেননি।

তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় ওই দালাল এগিয়ে আসেন। তিনি নিজেকে ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘যেসব যাত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন সিল লাগাতে চান না কিংবা ঝামেলামুক্তভাবে কাজ করাতে চান, শুধু তাঁদের পাসপোর্ট নিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় আমরা দ্রুত কাজ করে দিই। এ জন্য পুলিশকে পাসপোর্টপ্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হয়।’

জানতে চাইলে অভিবাসন পুলিশের বেনাপোলের ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, তাঁর কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে দালালের কাছে দেওয়ার কোনো বৈধতা নেই। কোনো পুলিশ সদস্য যদি এটা করেন, তাহলে অন্যায় করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

টাকা তুলে পুলিশের লোক
‘বেনাপোল কমিউটার’ ট্রেন বিকেল চারটায় বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিজিবির একটি দল স্টেশনে পাহারা দিচ্ছে। অনেকের ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানি পণ্য নিয়ে অসংখ্য মানুষ ট্রেনের বগিতে উঠে পড়লেন। ট্রেনের আসনের তলায় চোরাই পণ্যের ব্যাগ তাঁরা সাজিয়ে রাখলেন। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরাও ট্রেনে উঠে পড়েন। ব্যাগ তল্লাশি করে করে বিজিবি সদস্যরা নাভারণ রেলওয়ে স্টেশনে নেমে গেলেন। পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল তখনো ট্রেনে। নাভারণ স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ার কিছুক্ষণ পর সাদাপোশাকে দুজন ব্যক্তি চোরাচালানিদের কাছে গিয়ে বলছেন, ‘দে’। চোরাচালানি তাদের হাতে গুঁজে দিচ্ছেন টাকা।

কিসের টাকা দিলেন? জানতে চাইলে এক নারী বলেন, ‘ওরা পুলিশের লোক। প্রতিদিনই ওদের টাকা দিতে হয়।’ এ ব্যাপারে রেলওয়ে পুলিশ খুলনার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ চোরাচালানের কোনো টাকার ভাগ পায় না। পুলিশের নামে যারা ট্রেনে চাঁদাবাজি করছে তাদের নাম-পরিচয় দেন। আটক করা হবে।’