রাজধানীসহ সাত জেলায় 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত ১০

দেশজুড়ে র‍্যাব ও পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে রোববার দিবাগত রাতের বিভিন্ন সময় রাজধানীসহ সাত জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও ১০ নিহত হয়েছেন।

পুলিশ বলছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরায় মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন চারজন। বাকিদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশের সঙ্গে ও একজন র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

এ নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর ১৪ দিনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ১০১। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মাদক ব্যবসায়ী।

গতকাল রাতের বন্দুকযুদ্ধের পর দু-একটি ছাড়া প্রতিটি ঘটনাস্থল থেকেই ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য, দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করার হয় বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেন, যতক্ষণ না মাদকের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আসবে, তত দিন পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। এটি নিয়মিত অভিযান। মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত এই ‘যুদ্ধ’ অব্যাহত থাকবে।

চলমান ‘বন্দুকযুদ্ধ’ মাদকের আগ্রাসন বন্ধ করবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল বলেন, ‘যে পদ্ধতি ভালো হয়, সেটাই করে যাব। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। আমাদের এক সাংসদ (আমানুর রহমান খান) জেলে আছেন। প্রধানমন্ত্রী মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। তাই মাদকবিরোধী অভিযান চলবে।’

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

কুমিল্লা: দেবীদ্বার ও সদর দক্ষিণ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুজন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন দেবীদ্বার উপজেলার পশ্চিম ভিংলাবাড়ি এলাকার এনামুল হক ভূইয়া প্রকাশ দোলন ওরফে দুলাল (৩৫)। আরেক জন হলেন সদর দক্ষিণ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের মো.নূরু মিয়া (৫৫)। এর মধ্যে এনামুলের বিরুদ্ধে ১২টি এবং নূরুর বিরুদ্ধে ১১টি মাদকের মামলা রয়েছে। এনামুল জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। নূরুর নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের আগের তালিকায় রয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে। এ ঘটনায় দেবীদ্বার ও সদর দক্ষিণ মডেল থানায় পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা, মাদক ও অস্ত্র আইনে তিনটি করে মামলা হয়েছে।

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ডিবির ভাষ্য, নিহত ব্যক্তি রাজধানীর মিরপুরের চলন্তিকা বস্তির শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর নাম নজরুল ইসলাম ওরফে নজু সর্দার। তাঁর বিরুদ্ধে ২২টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

পিরোজপুর: পুলিশের সঙ্গে পৃথক কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. ওহিদুজ্জামান (৩৭) ও মিজানুর রহমান সরদার (৩৫) নামের দুজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, দুজনই মাদক ব্যবসায়ী। নিহত ওহিদুজ্জামান নেছারাবাদ উপজেলার কৌড়িখাড়া গ্রামের এবং মিজানুর রহমান সরদার মঠবাড়িয়া উপজেলার খায়ের ঘটিচোরা গ্রামের বাসিন্দা। ডিবি পুলিশের ভাষ্য, গতকাল দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশ পিরোজপুর পৌরসভার কৃষ্ণপুর এলাকা থেকে ওহিদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে নিয়ে রাতে পুলিশ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে বের হয়। সদর উপজেলার টোনা বেইলি সেতু এলাকায় পৌঁছালে ওহিদুজ্জামানের সহযোগীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। এতে ওহিদুজ্জামান গুলিবিদ্ধ হয়ে যারা যায়। আহত হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্য।

ডিবি পরিদর্শক এ কে এম মিজানুল হক জানান, ওহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আটটি মাদক মামলা রয়েছে। গতকাল পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত একটি মাদক মামলায় তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।

আরেকটি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মিজানুর রহমান। পুলিশের দাবি মিজানুরের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও মাদকের ছয়টি মামলা রয়েছে। মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার জানান, উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের হাওলাদার বাড়ি এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতির খবর পেয়ে থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি গুলিতে মিজানুর নিহত হয়। আহত হয় ছয় পুলিশ সদস্য।

নাটোর: গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সিংড়া উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি গ্রামের ভাটোপাড়া এলাকায় র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবদুল খালেক (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মাদক ভাগাভাগি হচ্ছে এমন খবর পেয়ে র‍্যাব সেখানে গিয়েছিল। এ সময় দুই পক্ষের মধ্য গুলি বিনিময় হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে একজনরে মৃতদেহ পাওয়া যায়। সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে মাদক,চোরাচালান,অস্ত্র ও অপহরণসহ ২০টি মামলা রয়েছে। ঘটনার পর তার বুকে দুটি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।

তবে খালেকের বাড়ির এক প্রতিবেশী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, গতকাল রাতে তারাবির নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে তারা শোনতে পান আব্দুল খালেককে কারা যেন ধরে নিয়ে গেছে। আজ সকালে তাঁরা জানতে পারেন খালেক বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে।

মুন্সিগঞ্জ: পৌর এলাকার কাজলা সেতু থেকে সুমন বিশ্বাস ওরফে কানা সুমন (৩২) নামের এক নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সুমন নৈদীঘির পাথর গ্রামের বাবুল বিশ্বাসের ছেলে। পুলিশের দাবি, মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মীরকাদিম পৌরসভায় দুই মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে সুমন নিহত হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানান, সুমনের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় ২৫টি মাদক মামলা রয়েছে।

ঝিনাইদহ: সদর উপজেলায় জাড়গ্রাম এলাকায় গতকাল রাতে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জাড়গ্রামের ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে তাঁর লাশ উদ্ধার হয়। পুলিশ বলছে, দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর গোলাগুলিতে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। তবে নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ জানাতে পারেননি।

সাতক্ষীরা: সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আগুনপুর গ্রাম থেকে দুটি গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পাশ থেকে একটি পিস্তল ও ১০৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তিরা হচ্ছেন খলিলুর রহমান ওরফে পুটে সরদার (৪০) ও এমদাদুল কারিগর (৪৫)। খলিলুর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন লক্ষ্মীদাড়ি গ্রামের আজগর আলীর ছেলে। আর এমদাদুল সাতক্ষীরা শহরের মধুরডাঙ্গীর এরফান আলী কারিগরের ছেলে।

নিহত পুটে সরদারের বাবা আজগর আলী জানান, একটি মামলায় পুটে গতকাল সাতক্ষীরা আদালতে হাজিরা দিতে যায়। আদালত থেকে বাড়ি ফেরার পথে সাতক্ষীরা শহর থেকে দুপুর একটার দিকে সাদা পোশাকের কয়েকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। আজ সকালে শুনছেন ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।

পুলিশের উপপরিদর্শক প্রবীর কুমার রায় জানান, নিহত দুজনের গলায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে পৃথকভাবে এ দুজন নিহত হয়েছে।