ময়মনসিংহ অঞ্চলের ছয় জেলায় বুধবার থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক

ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের ছয় জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বুধবার থেকে এ ধর্মঘট শুরু হবে বলে জানিয়েছে তারা। ওই ছয় জেলা হলো ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ।

সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বাস ভাঙচুরের ঘটনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার না করাকে এ ধর্মঘটের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন ঐক্য পরিষদের নেতারা। ১৩ মে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মারধরের ঘটনা ঘটে।

সংগঠনটির দাবি, তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ট্রাকচালককে মারধর করার পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে ৪০টি বাস ভাঙচুর করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বেলতলি এলাকায় মানুষের বাড়িতে হামলা, ফসল পোড়ানো ও পথচারীদের মারধর করারও অভিযোগ আনা হয়।

১৩ মে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বেলতলি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি বাসের সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর জের ধরে শিক্ষার্থীরা বাস থেকে নেমে ট্রাকের চালককে মারধর করেন বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। ট্রাকচালকের বাড়ি ওই এলাকায় হওয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রামবাসী ও পরিবহনশ্রমিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। পরে ওই দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মহাসড়কের বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বেশ কিছু বাস ভাঙচুর করেন। শিক্ষার্থীদের মারধর করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক অবরোধ করে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় পরিবহনশ্রমিকদের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। পুলিশ ট্রাকচালকসহ চারজন পরিবহনশ্রমিককে গ্রেপ্তার করে। ১৪ মে বেলতলি এলাকায় শিক্ষার্থীরা ফের মহাসড়ক অবরোধ করে গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করেন বলে জানা যায়। ওই দিন সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দুজন সাংবাদিককেও মারধর করার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উত্তরাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. আমিনুল হক শামীম। তিনি বলেন, ‘আমরা মামলা করলেও পুলিশ গতকাল (রোববার) পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। আমাদের পক্ষ থেকে বারবার প্রশাসনকে তাগিদ দেওয়ার পর কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় আগামী বুধবার থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলায় বাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ওই জেলার মালিক ও শ্রমিকেরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমিনুল হক শামীম বলেন, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয়ে দাবি আদায়ের জন্য মহাসড়ক অবরোধ করে বাস ভাঙচুর করেন। এমনকি ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ না থাকলেও তাঁরা (শিক্ষার্থীরা) বাস ভাঙচুর করেন। গত তিন বছরে শিক্ষার্থীরা শতাধিক বাসে ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে আমাদের কাছে পরিসংখ্যান রয়েছে।’

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে ত্রিমুখী জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মারধর করার অভিযোগ। তিন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে, ময়মনসিংহ বিভাগের কমিশনার, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জেলা পুলিশ একটি গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তির জন্য দু-এক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবে।